সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: আশঙ্কা ছিলই৷ বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যের হাসপাতালগুলির বহির্বিভাগের পরিষেবা বন্ধ থাকায় বিক্ষোভ, অশান্তিও বাড়তে শুরু করে৷ বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওপিডি চালুর দাবিতে বিক্ষোভ দেখান রোগীদের একাংশ৷ এমনকী আউটডোরের তালা ভেঙে ঢুকে পড়তে চান তাঁরা৷ তাতেই জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়ান তাঁরা৷ দফায় দফায় ধস্তাধস্তি বাঁধে৷ পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে৷ দলে দলে রোগীরা পরিষেবা না পেয়ে ফিরে যেতে থাকেন৷ শুধুমাত্র মরণাপন্ন রোগী ছাড়া কাউকেই ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না হাসপাতালের ভিতরে৷ রাজ্যের অন্যান্য সরকারি হাসপাতালগুলোতে এমন সংঘর্ষ না হলেও, কমবেশি একই অচলাবস্থা সর্বত্র৷
এনআরএসে শিক্ষানবীশ চিকিৎসকক মারধরের জেরে আজ সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত রাজ্যের সমস্ত সরকারি, বেসরকারি হাসপাতালের আউটডোর পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস৷ জরুরি পরিষেবাকে এর বাইরে রাখা হলেও, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা যাচ্ছে, এমারজেন্সি বিভাগও ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে৷ এমনিতেই রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলিতে রোগীর বেশ চাপ থাকে৷ দিনের শুরু থেকেই আউটডোরে ভিড়ও বাড়তে থাকে৷ বুধবার পরিষেবা না পেয়ে একে একে ফিরে যেতে হয় তাঁদের৷ এই পরিস্থিতিতে ক্ষোভও বাড়তে থাকে তাঁদের৷ কিন্তু চিকিৎসকরাও অনড় নিজেদের সিদ্ধান্তে৷ কোনওভাবেই নিরাপত্তা সুনিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা কর্মবিরতি তুলবেন না বলে জানিয়ে দিচ্ছেন৷
একই পরিস্থিতি কলকাতা এবং রাজ্যের অন্যান্য সরকারি হাসপাতালে৷ এনআরএস, এসএসকেএমের গেটে তালা ঝুলছে৷ সকালে পরিষেবা না পেয়ে এক্সাইডের কাছে বেশ কিছুক্ষণ রাস্তা অবরোধ করে রোগীদের একাংশ৷ কোথাও আবার সকালের দিকে জরুরি বিভাগ চালু থাকলেও, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাও বন্ধ হয়ে যায়৷ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ, বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ, জলপাইগুড়ি হাসপাতাল থেকে প্রচুর রোগী ফিরে গিয়েছেন৷ বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যেখানে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ রোগী পরিষেবা পান, সেখানে আজ মাত্র ১৬০ জন চিকিৎসাধীন৷ তবে এসবের মাঝে কিছুটা আশার আলো দেখাচ্ছে বসিরহাট হাসপাতাল৷ সেখানে পরিষেবা মোটের উপর সচল রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে৷
এই অবস্থায় বিপদ টের পেয়ে নড়েচড়ে বসেছে নবান্ন৷ রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা এভাবে ব্যাহত হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী জরুরি বৈঠকে বসেছেন৷ জট কাটানোর উপায় খুঁজতে স্বাস্থ্য সচিব রাজীব সিনহা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য অধিকর্তাদের সঙ্গে মিনিট ৪০ ধরে দফায় দফায় আলোচনা হয়েছে৷ যদিও এখনও কোনও সমাধানসূত্র বেরোয়নি বলেই খবর৷ সূত্রের আরও খবর, আন্দোলনকারীদের মূলত তিনটি দাবি মেনে নেওয়ার উপর নির্ভর করছে সমাধানের সম্ভাবনা৷ প্রথমত, জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে এবং আহত ইন্টার্ন চিকিৎসককে দেখতে যেতে হবে মুখ্যমন্ত্রীকে৷ দ্বিতীয়ত, যারা গ্রেপ্তার হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ এবং মামলা রুজু হয়েছে, সেটা জানাতে হবে৷ শেষত, যেসব পুলিশকর্মী ওইদিন নির্বিচারে চিকিৎসকদের উপর হামলা চালিয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধেই বা কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাও জানাতে হবে আন্দোলনকারীদের৷ এসব দাবি মেনে মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসলেই সমাধান সূত্র বেরিয়ে আসবে৷ দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়েই হাসপাতালগুলির বহির্বিভাগ বন্ধ রেখে এমন নজিরবিহীন প্রতিবাদে চিকিৎসকদের শামিল হওয়া রাজ্য প্রশাসনের কপালে চিন্তার ভাঁজ বহুগুণ বাড়িয়েছে৷
দেখুন ভিডিও
ছবি: মুকুলেসুর রহমান৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.