সৌরভ মাজি, বর্ধমান: অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাত হয়ে গেলেও তা করা হয়নি। এই নিয়ে চিকিৎসকের কাছে জানতে যান পরিবারের লোকজন। আর তা নিয়ে বচসার জেরে এক রোগীর স্বামীকে জুনিয়র ডাক্তাররা বেধড়ক মারধর করেন বলে অভিযোগ। এমনকী সরকারি হাসপাতালে ওই রোগীর আর চিকিৎসা করানো হবে না বলে ওই চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন বলেও অভিযোগ। ঘটনায় রোগীর স্বামীর চোখের নিচে ফেটে যায়। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ঘটনার বিষয়ে ওই রোগীর পরিবারের তরফে হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট কাম ভাইস প্রিন্সিপ্যাল (এমএসভিপি)-র কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তপক্ষ ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি, চিকিৎসকদের সহিষ্ণুতা বাড়াতে কাউন্সেলিং করানোরও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
হাসপাতালের ডেপুটি সুপার অমিতাভ সাহা বলেন, “সঠিকভাবে কী ঘটেছে তা জানার জন্য তদন্ত করা হচ্ছে। বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গেও কথা বলা হবে।” তিনি জানিয়েছেন, রোগীর আত্মীয়রা অনেক সময় অধৈর্য্য হয়ে ওঠেন। মেজাজ হারিয়ে ফেলেন। চিকিৎসকদের মধ্যেও সেই প্রবণতা দেখা দিচ্ছে। সেটাও কখনওই কাম্য নয়। তিনি বলেন, “চিকিৎসকরা যাতে আরও ধৈর্য্যশীল হন তার জন্য কাউন্সেলিং করা হয়। চিকিৎসকদেরও বোঝা প্রয়োজন রয়েছে রোগীর পরিবারের মানসিক অবস্থা কেমন থাকে। সেটা বুঝতে পারলে এই ধরনের ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে।”
[প্রতিবেশীর তৎপরতায় ৮ দিন পর বাড়ি ফিরলেন ’সর্বহারা’ প্রৌঢ়]
বর্ধমান শহরের অদূরে দেওয়ানদিঘি থানার নতুনগ্রামের মনিরুল খানের স্ত্রী পুতুল বেগমের পেটের যন্ত্রণা হওয়ায় তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয় তাঁকে। গত বৃহস্পতিবার ওই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সন্ধ্যায় পেটে টিউমারের অস্ত্রোপচারের কথা জানান বলে মনিরুল এমএসভিপিকে করা অভিযোগে জানিয়েছেন। কিন্তু সেদিন রাত্রি সাড়ে ১০টাতেও অস্ত্রোপচার না হওয়ায় মনিরুল চিকিৎসকের কাছে জানতে যান কখন তা হবে। মনিরুলের অভিযোগ, সেই সময় কয়েকজন জুনিয়র ডাক্তার তাঁর উপর চড়াও হয়। তাঁকে বেধড়ক মারধর করে। মনিরুলের ডানচোখের উপর মারাত্মকভাবে চোট লেগেছে। তিনি আরও অভিযোগ করেন, মারধরের সময় ওই চিকিৎসকরা গালিগালাজ করে। তাঁকে বলে, ‘যা পারিস করে নে।’
[সাড়ে ৮৪ লক্ষ টাকার কয়েন সরিয়ে গ্রেপ্তার ব্যাংক আধিকারিক]
মনিরুল শনিবার জানান, ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন পুতুল। তিনি স্বামীকে বলেন বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করাবেন। এই হাসপাতালে আর চিকিৎসা করাবেন না। তখন জুনিয়র ডাক্তাররাই না কি তাঁদের বলে দেন, এখানে চিকিৎসা করা হবে না। বাইরে চলে যান। এদিন সকালে লিখিত অভিযোগ করে ঘটনার সুবিচার চেয়েছেন মনিরুল। ডেপুটি সুপারের উদ্যোগে এদিন মনিরুলের চোখের চিকিৎসা করানো হয়েছে হাসপাতালে। পাশপাাশি, তাঁর স্ত্রীরও যথাযথ চিকিৎসা করানোর আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে মনিরুলকে। রোগীর আত্মীয়দের হাতে চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মীদের মারধরে ঘটনা প্রায়ই ঘটে। এইভাবে রোগীর পরিবারের লোকজনও আক্রান্ত হচ্ছেন চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীদের হাতেও। শুক্রবারও বহির্বিভাগে স্বাস্থ্যকর্মী ও মহিলা নিরাপত্তাকর্মীদের হাতে আক্রান্ত হন রোগীর আত্মীয়রা। এই বিষয়েও এমএসভিপির কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.