সৌরভ মাজি, বর্ধমান: সিটি স্ক্যানের রিপোর্ট পেতেই কেটে গেল প্রায় এক সপ্তাহ। রিপোর্ট না মেলায় সঠিক চিকিৎসাই শুরু করা গেল না। রিপোর্ট যখন হাতে এল ততক্ষণে সব শেষ। মৃত্যু হয়েছে রোগীর। আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার ধুন্ধুমার বেধে যায় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে হাসপাতাল সুপারের ঘরের সামনে তুমুল বিক্ষোভ দেখান রোগীর আত্মীয়-পরিজনরা। নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কিও শুরু হয়ে যায়। হাসপাতালের ক্যাম্প থেকে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। রোগীর পরিবারের তরফে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে হাসপাতাল সুপারের কাছে। অভিযোগ, ‘আংশিক সত্য’ বলে স্বীকার করেছেন সুপার উৎপল দাঁ। হাসপাতালের স্ক্যানের দায়িত্বে থাকা পিপিপি-মডেলের বেসরকারি সংস্থাকে শোকজ করেছেন তিনি। রিপোর্ট দিতে বড়জোর একদিন লাগার কথা। সেখানে কেন সাতদিন সময় লেগে গেল তা জানতে চাওয়া হয়েছে দিশারি নামের ওই সংস্থার কাছে।
[বাল্যবিবাহ রুখে প্রাণনাশের হুমকির মুখে ছাত্রী, পাশে দাঁড়াল প্রশাসন]
পূর্ব বর্ধমানের দেওয়ানদিঘি থানার খড়িড্ড্যা গ্রামের কালাচাঁদ মালিক (৩৬) সোমবার গভীর রাতে খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। মাথায় প্রচণ্ড যন্ত্রণা হচ্ছিল তাঁর। সঙ্গে বমি বমি ভাবও ছিল। তাঁকে মঙ্গলবার সকালে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ভর্তি করা হয়। রাধারানি ওয়ার্ডে ভর্তির কিছু পরেই মৃত্যু হয় তাঁর। এরপরই চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা। ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। মৃতের পরিজনদের অভিযোগ, এদিন হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও চিকিৎসাই সেভাবে করা হয়নি। কোনও সিনিয়র ডাক্তারও ছিলেন না এদিন। তার থেকেও মারাত্মক অভিযোগ করেছেন তাঁরা। দিন ১৫ আগে মাথায় যন্ত্রণা ও বমি হওয়ায় তাঁকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। মৃতের ভাই শ্যামল মালিক জানান, সেই সময় প্যারাসিটামল ট্যাবলেট দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল আউটডোর থেকে। তিন সাতেক আগে ফের অসুস্থ বোধ করেন কালাচাঁদবাবু। তাঁকে জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসকরা না দেখেন আউটডোরে নিয়ে গিয়ে দেখাতে বলেন রোগীকে। সেখানেও চিকিৎসক দেখে কিছু প্যারাসিটামল ট্যাবলেট দিয়ে ছেড়ে দেন। তবে সিটি স্ক্যান করানোর জন্য বলেন। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সিটি স্ক্যান পরিবেষা বন্ধ থাকায় এই হাসপাতালের সুপার স্পেশালিটি উইং অনমায় হাসপাতালে গিয়ে তা করানো হয়। গত ১৬ আগস্ট কালাচাঁদবাবুর সিটি স্ক্যান করানো হলেও সেদিন রিপোর্ট দেওয়া হয়নি। পরিবারের লোকজনকে জানিয়ে দেওয়া হয় সাতদিন পরে রিপোর্ট নিয়ে যেতে।
[রাতবিরেতে যত্রতত্র পড়ছে ঢিল, ভূতুড়ে কাণ্ডে আতঙ্কে ওদলাবাড়ির বাসিন্দারা]
অনাময় হাসপাতালে সিটি স্ক্যান পরিষেবা পিপিপি মডেলে দেওয়া হয়ে থাকে। দিশারি নামে সংস্থা সেখানে এই পরিষেবার দায়িত্বে রয়েছে। ১৬ আগস্ট সিটি সক্যান করানো হলেও রিপোর্ট দিতে এত দেরি হওয়ায় ক্ষুব্ধ হাসপাতাল সুপার উৎপলবাবুও। এদিন তিনি বলেন, “মৃত রোগীর দাদার সঙ্গে কথা বলেছি। জেনেছি, ১৬ আগস্ট স্ক্যান করানো হলে বড়জোর তার পরদিন রিপোর্ট দিয়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু এত দেরি কেন হবে। ওই সংস্থাকে শোকজ করা হয়েছে। পরিবারের তরফে অন্য যা যা অভিযোগ করা হচ্ছে তা তদন্ত করে দেখা হবে।” কী ছিল সিটি স্ক্যান রিপোর্টে? সুপার জানান, রিপোর্টে রয়েছে ব্রেনে টিউমার জাতীয় কিছু রয়েছে। রিপোর্ট আগে পেলে সঠিক চিকিৎসা শুরু করা যেত। মৃতের আর একভাই অমিত মালিক বলেন, “এইভাবে চিকিৎসায় গাফিলতিতে যেন কারও মৃত্যু না ঘটে। রিপোর্ট আগে দিলে বা সঠিক চিকিৎসা শুরু করলে দাদাকে হয়তো বাঁচানো যেত। বিনা চিকিৎসায় এইভাবে অকালে মারা যেতে হত না।”
ছবি: মুকুলেসুর রহমান
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.