সৌরভ মাজি, বর্ধমান: মাদক মেশানো চা খাইয়ে রোগীর পরিজনদের সর্বস্ব লুঠের ঘটনা ঘটল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। মাস দেড়েক আগেও একইভাবে রোগীর পরিবারের লোকজনকে মাদক মেশানো খাবার খাইয়ে লুটের ঘটনা ঘটেছিল। শুধুই এই ধরনের ঘটনাই নয়, রোগীর আত্মীয়দের ভুল বুঝিয়ে কেপমারির ঘটনাো সম্প্রতি ঘটেছে এই হাসপাতালেই। বারবার এই ধরণের ঘটনায় ফের হাসপাতালের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। হাসপাতালের ডেপুটি সুপার অমিতাভ সাহা জানিয়েছেন, অপরিচিত কারওর কাছ চা বা যে কোনও ধরণের খাবার যাতে কেউ না খান তার জন্য মাইকে সর্বদা প্রচার করা হয়। রোগীর আত্মীয়দের সচেতন করা হয়। কিন্তু তারপরেও কেউ যদি তা না শোনেন তাহলে এই ধরনের সমস্যা রোধ করা মুশকিল।
পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার পাঁচড়া গ্রামের কাজল বাগ হৃদযন্ত্রের সমস্যা নিয়ে সোমবার হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি রাধারানি ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন। তাঁর পরিবারের লোকজন হাসতাপাতালেই রাত কাটাচ্ছিলেন সেই দিন থেকেই। মঙ্গলবার রাতে ওই রোগীর স্বামী লালু বাগ ও দাদা রামপ্রসাদ মল্লিক রাধারানি ওয়ার্ডের ১ ও ২ ব্লকের সামনের প্রতীক্ষালয়ে ছিলেন। তাঁদের পাশেই ছিলেন বছর চল্লিশের এক ব্যক্তিও। সেই ব্যক্তি লালুবাবু ও রামবাবুর সঙ্গে আলাপ জমান। ওই ব্যক্তির শোয়ার জন্য সেখানেই ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু লালুবাবুরা শোয়ার মত জায়গা পাননি। বিশ্বাস অর্জনের জন্য ওই ব্যক্তি লালুবাবুদের জন্যও বড় করে জায়গায় পলিথিনের কাগজ পেতে দেয়। সহৃদয় মনে করে ওই ব্যক্তির সঙ্গে ভাব জমিয়ে ফেলেন লালুবাবুরা। সামান্য কথাবার্তার পর ওই ব্যক্তি রামবাবু ও লালুবাবুকে চা খাওয়ার জন্য বলেন। নিজেই তাদের চা দেন।
লালুবাবুরাও ভদ্রতার খাতিরে ওই ব্যক্তিকে রাতে আবার চা খাওয়ান। তারপর তিনজনই ঘুমিয়ে পড়েন বলে বুধবার জানিয়েছেন লালুবাবু। মাঝরাতে উঠে ওই ব্যক্তি ফের লালুবাবুদের ডেকে তোলেন। এদিন লালুবাবু বলেন, “ঘুম থেকে তুলে ওই ব্যক্তি আমাদের ফের চা খেতে দেয়। চা খেয়ে আমরা ঘুমিয়ে পড়ি।” সকালে ঘুম থেকে উঠে তাঁরা দেখেন পাশের ওই ব্যক্তি নেই। পরে তাঁরা পকেটে হাত দিয়ে দেখেন মোবাইল নেই। টাকা পয়সাও নেই। ব্যাগ খুলে দেখেন ব্যাগের টাকাও নেই। তখন সব বুঝতে পারেন তাঁরা। রাতের ওই ব্যক্তিই বন্ধু সেজে সর্বস্ব লুট করেছে। তাঁরা হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পে গিয়ে পুরো ঘটনা জানান। লিখিতভাবে অভিযোগও করেন। মাদক মিশ্রিত চা খাওয়ানো হয়েছিল বলেই মনে করছেন তাঁরা। তাঁদেরও হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। গত সেপ্টেম্বর মাসেও এইভাবেই প্রতারিত হয়েছিলেন বাঁকুড়ার ইন্দাস থেকে রোগী নিয়ে আসা একটি পরিবারের লোকজন। ওই মাসেই বীরভূমের রাউতাড়া থেকে আসা এক রোগীর পরিবারের লোকজনকেও মাদক খাইয়ে লুট করা হয়েছিল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.