সৌরভ মাজি, বর্ধমান: শিশুচুরির রেষ কাটতে না কাটতেই এবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে রোগী নিখোঁজ। ঘটনায় ফের প্রশ্নের মুখে হাসপাতালে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রোগীর পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁদের সঙ্গে কোনও সহযোগিতা করছিলেন না গত তিনদিন ধরে। এমনকী সিসি ক্যামেরার ফুটেজও তাঁদের দেখানো হচ্ছিল না বলেও অভিযোগ। সোমবারও রোগীর পরিজনরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করেন। ডেপুটি সুপার অমিতাভ সাহা তাঁদের সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। পুরো ঘটনার তদন্তেরও আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মেমারির কাঁটাডাঙা গ্রামের নিতাই সোরেন (৪৭) নামে এক ব্যক্তির খিঁচুনি হওয়ায় গত বুধবার তাঁকে হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছিল। রাধারানি ওয়ার্ডে ভরতি ছিলেন তিনি। গত শুক্রবার তাঁর সিটি স্ক্যান করানোর জন্য বলেছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেই অনুযায়ী হাসপাতাল থেকে গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়। রোগীর এক আত্মীয় সেই বিষয়টি দেখার জন্য বাইরে যান। পরে তিনি ফিরে এসে দেখেন নিতাইবাবু বেডে নেই। পরিবারের লোকজন তখন ওই ওয়ার্ডে নার্স ও অন্য কর্মীদের বিষয়টি জানান। অভিযোগ, সেই সময় সেখানে কর্মরত কর্মীরা তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। তখন তাঁরা হাসপাতালে সুপারের দপ্তরে যান। সেখান থেকে তাঁদের বলা হয় পুলিশে অভিযোগ জানাতে। সেই অনুযায়ী বর্ধমান থানায় মিসিং ডায়েরি করা হয় পরিবারের তরফে। কিন্তু পরদিনও রোগীর সন্ধান না পেয়ে তাঁরা সুপার অফিসে যোগাযোগ করে সিসি ক্যামেরার ফুটেড দেখতে চান। পরিবারের অভিযোগ, সেটাও তাঁদের দেখানো হয়।
গ্রামে ফিরি গিয়ে কাঁটাডাঙা থেকে রবিবার তিনগাড়ি বোঝাই করে আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজন হাসপাতালের উদ্দেশ্য রওনা হয়েছিল। জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ মহম্মদ ইসমাইল বিষয়টি জানতে পেরে তাঁদের আটকান সেখানে। সোমবার তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি অসিত ঘোষকে নিতাইবাবুর পরিজনদের চারজনকে নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করার পরামর্শ দেন। সেই অনুযায়ী এদিন তাঁরা হাসপাতালে গিয়ে ডেপুটি সুপারের সঙ্গে দেখা করেন। নিখোঁজ নিতাইবাবুর মেয়ে সরস্বতী সোরেনের প্রশ্ন, হাসপাতালে সিসি ক্যামেরা রয়েছে, এত নিরাপত্তারক্ষী রয়েছে, এত কর্মী রয়েছে, তা সত্ত্বেও কীভাবে তাঁর বাবা হাসপাতাল থেকে উধাও হয়ে গেলেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও বিষয়টি গুরুত্ব না দেওয়ার ক্ষুব্ধ তাঁরা। হাসপাতালের ডেপুটি সুপার অমিতাভ সাহা জানিয়েছেন, কীভাবে ওই রোগী বাইরে বেরিয়ে গেলেন, একাই বেরিয়েছেন, না কি সঙ্গে কেউ ছিল পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারও গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, শারীরিকভাবে বেশি দূর যাওয়া সম্ভব ছিল না ওই রোগীর। কাছাকাছি কোথাও থাকতে পারেন বলে অনুমান তাঁদের। পুলিশকে তাঁরা বিষয়টি জানিয়েছেন। রোগীর মাথায় সমস্যা ছিল বলেই সিটি স্ক্যান করাতে বলা হয়েছিল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.