জল্পেশ মন্দির
বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বৃহত্তম শৈবতীর্থ জল্পেশ মন্দির (Jalpesh Mandir)। আগামী ৮ মার্চ থেকে ১০ দিন ব্যাপী এখানে চলবে শিবরাত্রি উৎসব। উত্তরের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয় এই উৎসবে। ফলে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে (2024 Lok Sabha election) মাথায় রেখে জনসংযোগ ও ভোট প্রচারের জন্য এই তীর্থক্ষেত্রকেই পাখির চোখ করেছে প্রতিটি রাজনৈতিক দল।
জানা যাচ্ছে, জল্পেশ মন্দিরের এই উৎসবে জনসংযোগ ও ভোট প্রচারের মোক্ষম সুযোগ ছাড়তে নারাজ কোনও রাজনৈতিক দল। প্রত্যেকে তাবু করে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রচারের পরিকল্পনা নিয়েছে। তৃণমূলের (TMC) তরফে রাজ্য সরকারের সাফল্য এবং বিভিন্ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গেরুয়া শিবির রাজ্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রচারের প্রস্তুতি নিয়েছে। বামেরা অবশ্য তৃণমূল ও বিজেপি দুই দলের বিরুদ্ধে পোস্টার-ব্যানারে প্রচারের ছক সাজিয়েছে। সঙ্গে লিফলেট, ব্যাজ বিলি তো থাকছেই। সেই সঙ্গে পূণ্যার্থীদের সঙ্গে আড্ডা জমানোর ফাঁকে ভোটের কথাও প্রচার করবেন প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বরা।
ময়নাগুড়ির প্রাক্তন বিধায়ক তথা পুরসভার চেয়ারম্যান অনন্তদেব অধিকারী বলেন, “জল্পেশ মেলায় প্রচুর মানুষের সমাগম হয়। লোকসভা নির্বাচনের আগে জনসংযোগের এতো বড় এবং সহজ সুযোগ মিলবে না। সেহেতু তৃণমূলের তরফে প্রচারের ব্যবস্থা থাকবে।” প্রচারে পিছিয়ে থাকতে নারাজ কামতাপুর পিপলস পার্টিও। তাদের তরফে তুলে ধরা হবে কামতাপুরি ভাষার সাংবিধানিক স্বীকৃতি এবং পৃথক রাজ্যের দাবি। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক সুভাষ বর্মন বলেন, “দলের জল্পেশ এলাকার নেতা-কর্মীরা তাবুর ব্যবস্থা করেছেন। সেখানে বসে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের সঙ্গে দেখা ও কথা হবে।” প্রচারের সুযোগ নিতে সমানভাবে তৎপর হয়েছে বামেরাও। অন্য বছরগুলোতে দলের কর্মীরা তাবুতে বসে সময় কাটাতেন। বই বিক্রি করতে। লোকসভা নির্বাচন যে এবার অন্যমাত্রা জুড়েছে স্বীকার করেছেন স্থানীয় প্রবীণ আরএসপি নেতা অতুল রায়। তিনি বলেন, “জল্পেশ মন্দিরের আকর্ষণে প্রচুর মানুষ এখানে ভিড় করেন। যতটা সম্ভব তাদের কাছে পৌঁছনো হবে এবারের লক্ষ্য।” প্রায় একই দাবি সিপিএমের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক সলিল আচার্যের।
জল্পেশ মন্দির কমিটির সম্পাদক গিরীন্দ্রনাথ দেব জানান, প্রতি বছর জল্পেশে শিবরাত্রি উৎসবে অন্তত দশ লক্ষাধিক মানুষের ভিড় হয়। এবারও তেমনই হবে। ময়নাগুড়ি শহর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে ওই মন্দির তৈরি করেন কোচবিহারের মহারাজা প্রাণনারায়ণ এবং তাঁর ছেলে মোদ নারায়ণ। প্রায় এক একর জমির উপরে তৈরি মন্দিরের উচ্চতা ১২৭ ফুট। ১২৪ ফুট দীর্ঘ এবং ১২০ ফুট চওড়া। মন্দির চত্বরে রয়েছে দুই একর আয়তনের ‘সুবর্ণ কুণ্ড’ নামে জলাশয়।
সম্প্রতি শুধু মন্দিরের বাইরের এলাকা নয়। গর্ভ গৃহে পর্যাপ্ত আলো এবং পাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জলাশয় রেলিং দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। জলাশয়ের পাড় বাধিয়ে পর্যটকদের বসার জায়গা হয়েছে। গড়ে তোলা হচ্ছে ২৭ টি শৌচাগার। পাশাপাশি এবার জল্পেশ মন্দির ঘিরে থাকবে ‘লেজার শো’। নিরাপত্তার প্রয়োজনে বসছে শতাধিক অত্যাধুনিক ক্যামেরা। ভিড় সামাল দিতে একসঙ্গে দশজন করে পূণ্যার্থীকে গর্ভগৃহে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হবে। মন্দির কমিটির সম্পাদক গিরীন্দ্রনাথ দেব বলেন, “অভিনব আলোকসজ্জার জন্য এবার শিবরাত্রি উৎসবে ভিড় বেশি হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.