বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: ভোট বড় বালাই! এবার ভোট প্রার্থীদের নজরে ভিন রাজ্যে কর্মরত শ্রমিকরা। লোকসভার প্রথম পর্বের ভোটের আগেই তাঁদের ঘরে ফেরাতে তৎপর কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ির ডান-বাম সব শিবির। প্রচারে বের হয়ে ইতিমধ্যে প্রার্থীরা টের পেয়েছেন পরিযায়ী শ্রমিকদের সংখ্যা নেহাত কম নয় এবং প্রত্যেকেই ভোটার। তাই এখন তাঁদের ফিরিয়ে এনে ভোটের লাইনে দাঁড় করানোই চিন্তার কারণ।
তৃণমূল ও বামেদের তরফে বুথ কমিটিগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ওই শ্রমিকদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তালিকা বানিয়ে ছেলেদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। গেরুয়া শিবিরও শ্রমিকদের নাম ঠিকানা জোগার করতে বিশেষ দল গঠন করেছে। শ্রমিকদের ফেরাতে বিভিন্ন রাজ্যের দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা শুরু করা হয়েছে।
কিন্তু তিন লোকসভা কেন্দ্রের কত ছেলেমেয়ে কাজের খোঁজে ভিন রাজ্যে রয়েছেন? এর সঠিক তথ্য কোনও মহলের কাছেই নেই। কারণ, কয়েক বছর আগে গ্রামের যে ছেলেরা ভিন রাজ্যে গিয়েছে তাদের নামের তালিকা তৈরির কাজ গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত এগোয়নি। এবার গ্রামে ভোট প্রচারের কাজে আগের মতো যুবকদের না পেয়ে রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বের মালুম হয় সমস্যাটি। এর পরই শুরু হয় খোঁজ।
এনিয়ে ইউটিইউসি-র সভাপতি নির্মল দাস বলেন, “জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলার শুধুমাত্র চা বলয়ে ৫০ হাজার ছেলের খোঁজ মিলেছে যারা গুজরাট, উত্তরপ্রদেশ, বেঙ্গালুরুতে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করছে। ওরা প্রত্যেকে ভোটার।” শুধু তো চা বলয় নয়। কৃষি এলাকাতেও একই ছবি ধরা পড়েছে। জলপাইগুড়ির মাধবডাঙ্গা, গধেয়াকুঠি, ভোটপট্টি, ক্রান্তি, আলিপুরদুয়ারের লতাবাড়ি, কামাখ্যাগুড়ি, শোভাগঞ্জ, রাঙ্গালিবাজনা, শিশুবাড়ির মতো একের পর এক গ্রামে ভোট প্রচারে প্রবীণরাই সংখ্যায় বেশি। পরিস্থিতি অস্বীকার করেননি তৃণমূলের রাজ্য কমিটির অন্যতম সম্পাদক মৃদুল গোস্বামী। তিনি বলেন, “প্রচুর ছেলে বাইরে আছে। বুথ কমিটিগুলোকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাঁদের বাড়িতে যোগাযোগ করে নামের তালিকা তৈরি করার জন্য। ওদের ফেরাতে বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।”
জলপাইগুড়ি জেলা সিপিএম সম্পাদক সলিল আচার্য অবশ্য দাবি করেছেন, শুধুমাত্র জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্র থেকে এক লক্ষের বেশি ছেলে দিল্লি, গুজরাট, হিমাচল প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, সিকিমে রয়েছে। ওদের কিছু অংশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন তাঁরা। এদিকে সমস্যা হচ্ছে, তাঁদের পরিবারের লোকজন ভোটের জন্য ছেলেদের বাড়িতে ফিরে আসা নিয়ে উৎসাহ দেখাচ্ছেন। কিন্তু পরিযায়ী শ্রমিকদের অনেকেই তা চাইছেন না। কেন? জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রের ময়নাগুড়ির মাধবডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা প্রমীলা বর্মন যেমন জানালেন, “ছেলে ফোন করে জানিয়েছে এখন খুব কাজের চাপ। তা ছাড়া এতো টাকা খরচ করে আসতে পারবে না।”
প্রমীলাদেবীর দুই ছেলে কেরালায় নির্মাণ সংস্থায় শ্রমিকের কাজ করছেন। প্রায় একই আভাস মিলেছে আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রের শিশুবাড়ির বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেনের কথায়। তাঁকেও মহারাষ্ট্র থেকে ছেলে জানিয়েছেন আসতে পারবেন না। এই ব্যাপারে বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য শ্যামচাঁদ ঘোষ বলেন, “প্রতিটি রাজ্যের দলীয় নেতৃত্বের কাছে নামের তালিকা পাঠিয়ে উত্তরের আট লোকসভা কেন্দ্রের ছেলেদের ফেরত আনার চেষ্টা চলছে। আমরা বলছি ভোট দিয়ে ফিরে যেতে। তবে কেউ না আসতে চাইলে জোর করা সম্ভব নয়।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.