বিক্রম রায়, কোচবিহার: চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেছেন। কিন্তু, তা মানতে নারাজ পরিবার। জরুরি বিভাগের সামনে দেহ রেখে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে এক লিটার গরম দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করলেন পরিবারের লোকজন। শুধু তাই নয়, হাসপাতালে মূল গেটের সামনে দীর্ঘক্ষণ ওই দেহটি তেল মালিশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের ঝাড়ফুঁকও করা হয়। শনিবার ঘটনাটি ঘটেছে কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে (CGMCH)। সবার চোখের সামনে এই ঘটনা ঘটলেও পুলিশ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কার্যত দর্শকের ভূমিকা পালন করে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত কিশোরের নাম বিশাল বর্মন (১৭)। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তার মৃত্যু হয়। তার পরিবারের অভিযোগ, কোনও চিকিৎসা় হয়নি হাসপাতালে। মারা যাওয়ার আগে ওই কিশোর দুধও খেয়েছে। বেলা বারোটা থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা এই কাণ্ড চলার পর কিশোরের মৃতদেহ নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয় পরিবারের লোকজন। পরে অবশ্য পুন্ডিবাড়ি থানার পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়।
কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সুপার রাজীব প্রসাদ জানিয়েছেন, কিশোরকে জরুরি বিভাগে আনার আগেই মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু, তার পরিবার সেটা মানতে চায়নি। পরে ওরা নার্সিংহোমে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ফের হাসপাতালে নিয়ে এসে ভরতি করানোর চেষ্টা করে। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে কিশোরকে মৃত ঘোষণা করেন।
মৃত কিশোরের মা বাসন্তী বর্মন এবং বাবা সোরেন বর্মন জানিয়েছেন, বাণেশ্বর এলাকায় বাড়ির কাছেই একটি পুকুরে মাছ ধরবে বলে জল ছেঁচতে পাম্প লাগাতে যায় বিশাল। ওই সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। ছেলেকে দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সোরেন বর্মনের অভিযোগ, দেহটি মর্গে না নিয়ে বাইরে রেখে গরম দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা হয়। তাঁরা দেখেন ছেলে প্রায় ১ লিটার দুধ খেয়েছে। অনেকক্ষণ বেঁচেও ছিল। চিকিৎসকরা ব্যবস্থা নিলে বেঁচে যেত। কিন্তু, সেটা হয়নি। উলটে যে কোনও উপায়ে দেহটি মর্গে পাঠানোর চেষ্টা হয়।
যদিও পরিবারের অভিযোগ অস্বীকার করেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা। তাঁরা জানিয়েছেন, কিশোরকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল। চিকিৎসার কোনও সুযোগ মেলেনি। কিন্তু, সেটা পরিবারের লোকজন মানতে চাননি। ওরা গরম দুধ খাওয়ানোর কথা বলতে থাকেন। নিজেরাই দেহ নিয়ে সেই চেষ্টা করতে শুরু করেন। কিন্তু, হাসপাতালের সামনে দীর্ঘক্ষণ দেহ রেখে ঝাড়ফুঁকের পরও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হল না? এই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়েছেন হাসপাতাল ও পুলিশ কর্তারা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.