ছবি: প্রতীকী
গোবিন্দ রায়, বসিরহাট: আদালতের নির্দেশে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়নি বুধবার। রাতে যদি কেউ মৃতদেহ সরিয়ে দেয় যায় অন্যত্র! এই আশঙ্কায় সারারাত মৃত মেয়ের কবর পাহারা দিল পরিবার।
মাটিয়া থানা এলাকার এক নাবালিকার অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিয়েছে বসিরহাট (Bashirhat) আদালত। পাশাপাশি, তদন্তের অগ্রগতিতে থানার অফিসারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে বসিরহাটের বিশেষ পসকো আদালত। সেদিনের ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ-সহ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দ্রুত আদালতে পেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। বুধবারই নাবালিকার মৃতদেহ কবর থেকে তুলে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু বিশেষ কারণে এদিন সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়নি। তবে জানা হয়েছে, বিষয়টি বসিরহাটের মহকুমা শাসককে জানানো হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে মৃতদেহ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হবে।
জানা গিয়েছে, কর্মসূত্রে ওই নাবালিকার বাবা-মা বারাকপুরে থাকেন। গত মাসে নাবালিকার ভাইও বাবা মায়ের কাছে চলে যায়। বাড়িতে একমাত্র ছিল নাবালিকা ফরহানা। ছোট থেকেই সে প্রতিবেশীর বাড়িতে থেকে অভ্যস্ত। সবসময় ফারহানার সঙ্গে ফোনে কথা হত মা-বাবার। গত ১৮ সেপ্টেম্বর মেয়ের সঙ্গে শেষবার কথা বলেন তাঁরা। ১৯ সেপ্টেম্বর মেয়ে অসুস্থ খবর পেয়ে গ্রামে আসে নাবালিকার বাবা-মা-ভাই। এসে দেখে বাড়িতে পুলিশ ও গ্রামের লোকের ভীড়। জানতে পারে ফারহানা গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ঘটনার প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্তের রিপোর্টের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। রিপোর্ট বলা হয় আত্মহত্যা করেই মারা গিয়েছে সে।
এদিকে মেয়ের মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয় তার পরিবার পরিজনদের। পরিবারের দাবি, আত্মহত্যা নয়, গণধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে মেয়েকে। যার মূল অভিযুক্ত রাজেন। ঘটনার প্রেক্ষিতে পুনরায় সঠিক ময়না তদন্তের আবেদন জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয় মৃতের পরিবার। আইনজীবি অর্পণ হালদার জানান, মৃতের পরিবারের দাবি, অভিযুক্ত রাজেন মণ্ডলের বাড়ির লাগোয়া সিসিটিভির ফুটেজ এবং রেকডিং সংগ্রহ করা হোক। যার উল্লেখ সিজার লিস্টে নেই। এছাড়াও একজন নাবালিকার ময়নাতদন্তে যা যা প্রয়োজন তার কোন কিছুই মানা হয় নি। যে চিকিৎসক ময়নাতদন্ত করেছেন তিনি মেডিকো বিশেষজ্ঞ নন। তিনি এমবিবিএস, এমডি (সাইকিয়াট্রিস্ট)। সঠিক তদন্তের স্বার্থে পুনরায় মৃতদেহ কবর থেকে তুলে মেডিকো লিগ্যাল এক্সপার্ট চিকিৎসককে দিয়ে ফের ময়নাতদন্ত করা হোক। না হলে সঠিক বিচার মিলবে না।
এরপরই সেই আবেদন মঞ্জুর করে আদালত। অন্যদিকে, ১৮ দিন কেটে গেলেও অভিযুক্তরা কেন অধরা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দেয়। আদালতে রিপোর্ট দিয়ে তদন্তকারী অফিসার জানিয়েছেন, অভিযুক্তের বাড়ি তালা বন্দি অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বাড়ির সবাই পলাতক হলে এখনও পর্যন্ত সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা যায়নি। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তদের কেউ গ্রামে দেখেনি। প্রশ্ন উঠছে কেন তারা গ্রাম ছেড়ে পালাল? সম্ভবত বসিরহাট মহকুমা আদালতে এই প্রথম কোন মৃতদেহ কবর থেকে তুলে ফের ময়নাতদন্তের আদেশ দিল মহামান্য বিচারক।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.