সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: চোখ দুটো তার এতটাই উজ্জ্বল ছিল যে, জন্মের পর মা-বাবা আদর করে নাম রেখেছিলেন হিরণ। কিন্তু সেই চোখ মেলে তো আর কোনওদিনই তাকাবে না সে! নিদারুণ শ্বাসকষ্টে মাত্র তিনদিনেই অকালে মারা গিয়েছে দুধের শিশুটি। কিন্তু নাই—বা থাকল আদরের হিরণ। তার উজ্জ্বল চোখ জোড়া না হয় কাজে লাগুক চিকিৎসা বিজ্ঞানের কোনও গবেষণায়। জলভরা চোখে যেন বুকে পাথর রেখে শুধু ওই একটুকু আশা সম্বল করেই সদ্য মৃত একরত্তি ছেলের কর্নিয়া দান করলেন দুর্গাপুরের অরূপ ও দীপান্বিতা পান। এত অল্পবয়সি শিশুর কর্নিয়া দানের নজির দেশে সম্ভবত এই প্রথম।
অন্ডালের নর্থবাজারের বাসিন্দা অরূপবাবু পূর্ব রেলের কর্মী। কর্মসূত্রে থাকেন কাঁচরাপাড়ায়। দিন তিনেক আগে দুর্গাপুরের বিধাননগরের এক বেসরকারি হাসপাতালে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন অরূপবাবুর স্ত্রী দ্বীপান্বিতা। কিন্তু জন্মের পর থেকেই শ্বাসকষ্টের সমস্যা ধরা পড়ে শিশুটির। চিকিৎসকরা জানান, রক্তে অ্যামোনিয়ার মাত্রা বেশি হওয়াতেই শিশুটির এমন অস্বস্তি। যমে-মানুষে টানাটানির পর রবিবার মৃত্যু হয় ছোট্ট হিরণের। সদ্যোজাত সন্তানের মৃত্যুতে যখন অরূপবাবু ও তাঁর স্ত্রী ভেঙে পড়েছেন, তখন অরূপবাবুর দিদি মিঠু মণ্ডল কর্নিয়া দানের পরামর্শ দেন। দিদির পরামর্শ মেনে হিরণের কর্নিয়া দানের সিদ্ধান্ত নেয় পান দম্পতি। তাঁদের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয় বলে মন্তব্য করেছেন হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ যোশী আনন্দ কেরকেট্টা। ব্লাইন্ড রিলিফ সোসাইটির সম্পাদক কাজল দাসের দাবি, এর আগে নয়দিনের শিশুর কর্নিয়া দানের নজির ছিল দেশে। এবার সেই রেকর্ড ভাঙল অরূপ ও দীপান্বিতার তিনদিনের পুত্র হিরণ।
কিন্তু, মাত্র তিনদিনের শিশুর কর্নিয়া কি কারও চোখের আলো ফিরিয়ে দিতে পারে? ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের চক্ষু বিভাগের প্রধান ডাঃ মুকুল বিশ্বাস জানিয়েছেন, “এত অল্প দিনে কর্নিয়ার বিকাশ ঘটে না। কাজেই এই কর্নিয়ায় কারও দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে গবেষণার কাজে লাগতেই পারে।” তবে যে যাই হোক, এমন উদ্যোগ আগামীদিনে আরও অনেকেই মরণোত্তর চক্ষুদান ও অঙ্গদানে উৎসাহ দেবে বলে মনে করছেন অঙ্গদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্তরা।
ছবি: উদয়ন গুহরায়
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.