টিটুন মল্লিক ও সৌরভ মাজি: এনআরসি আতঙ্কে মৃত্যুর তালিকা দীর্ঘায়িত হচ্ছেই। এবার হৃদরোগে আক্রান্ত বাঁকুড়ায় মৃত্যু হল এক ব্যক্তির। বর্ধমানেও প্রাণ হারিয়েছেন আরেকজন। দুই পরিবারেরই অভিযোগ, নাগরিকপঞ্জি তৈরির সময় যথাযথ নথি পেশ করতে না পারার আতঙ্কেই প্রাণ কেড়েছে তাঁদের।
বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলে সিমলাপাল ব্লকের পাথরডোবা গ্রামটি মুসলিম সংখ্যালঘু অধ্যুষিত। দিন কয়েক ধরেই ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, জমির কাগজপত্র, রেশন কার্ড নিয়ে ঘোরাঘুরি করছিলেন সরকারি শিবিরে। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, অন্যান্য দিনের মতো শুক্রবার সকালে গ্রামের একটি চায়ের দোকানে এনআরসি নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা করতে করতে চায়ের কাপে চুমুক দেওয়ার পাশাপাশি এলাকার একাধিক
ব্যক্তির স্মার্ট ফোনে এনআরসি সংক্রান্ত নানান ভিডিও দেখেন তিনি। সেখান থেকে বাড়ি ফিরে ফের তিনি নিজের জমি, বাড়ি সংক্রান্ত নথিপত্র এবং পরিবারের সকলের আধার কার্ড, রেশন কার্ড, ভোটার কার্ডগুলি নিয়ে দেখতে বসেই তাঁর হার্ট অ্যাটাক হয়। সঙ্গে সঙ্গেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আজাদ আলি খান।
এদিকে, পূর্ব বর্ধমানের টেঙ্গাবেড়িয়ার গোয়ালাপাড়ায় একই কারণে মৃত্যু হয়েছে কমল ঘোষ নামে এক দিনমজুরের। মৃতের দাদা ইতল ঘোষ পাশের বাড়িতেই থাকেন। তিনি জানান, তাঁদের আদিবাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতায়। প্রায় ৭০ বছর আগে তাঁর বাবা ভোলানাথ ঘোষ কাজের তাগিদে এখানে এসে বসবাস শুরু করেন। ইতলবাবু বলেন, “এনআরসি চালু করে রাজ্যের ২ কোটি মানুষকে দেশছাড়া করার হুমকি শোনার পর থেকেই ভাই দুশ্চিন্তায় পড়েছিল। আবার কেউ তাকে বুঝিয়েছিল ১৯৭১ সালের দলিল জোগাড় করতে হবে। তা নিয়ে দুশ্চিন্তা বেড়ে যায়। কয়েকদিন ধরে ভাই বসতভিটের নথি খুঁজছিল।”
শুক্রবার ডিজিট্যাল রেশন কার্ড করানোর জন্য বিডিও অফিসে যাচ্ছিলেন কমলবাবু। রাস্তায় অসুস্থ হয়ে লুটিয়ে পড়েন। স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধারকরে তাঁকে বাড়িতে দিয়ে যায়। এরপর চিকিৎসক ডাকা হয়। তিনি দেখে মৃত ঘোষণা করেন। বৃহস্পতিবারও ডিজিট্যাল রেশন কার্ড করাতে গিয়েছিলেন কমলবাবু। কিছু নথি কম থাকায় সেদিন জমা দিতে পারেননি। এদিন তা নিয়ে যাওয়ার পথেই মর্মান্তিক ঘটনা। কমলবাবুর স্ত্রী সন্ধ্যাদেবী বলেন, “ভিটের নথি না পেয়ে স্বামীর রাতের ঘুম ছুটেছিল। খাওয়াদাওয়াও কার্যত বন্ধ করে দিয়েছিলেন আতঙ্কে। দুশ্চিন্তা থেকেই স্বামীকে এইভাবে হারাতে হল।” এনিয়ে রাজ্যে এনআরসি আতঙ্কে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৩।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.