শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: গত চার মাসে রাতের ছবিটা একটুকু বদলায়নি জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের কোনপাকরির সরকার পাড়া গ্রামে। গ্রামবাসীদের দাবি, প্রতিদিন রাতেই উড়ে আসছে ঢিল। এসে পড়ছে নির্দিষ্ট কয়েকটি বাড়ির চালে।ঢিলের আঘাতে তছনছ ঘরের চাল। অভিযোগ, আতঙ্কে মৃত্যু হয়েছে মীনা রায় (৫০) নামে এক মহিলার। তারপরেও বন্ধ হয়নি অত্যাচার। বরং নতুন সংযোজন ঘটেছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে ঢিলের সঙ্গে উড়ে আসছে মৃত্যুর পরোয়ানা। তাতে লেখা, “রাহুল তোর বাবা মারা যাবে কিছু করতে পারবি না।” আর একটা কাগজের টুকরোয় লেখা রয়েছে, “তোরা মারা যাবি, গ্যারান্টি মারা যাবি।”
একের পর এক পাথরে মোড়া মৃত্যুর হুঁশিয়ারিপত্রকে কেন্দ্র করে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে সরকার পাড়া গ্রামে। শুক্রবার কোতোয়ালি থানার দ্বারস্থ হয়েছেন রাহুলের পরিবার। পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ। কিন্তু তাতেও আশ্বস্ত হতে পারছেন না এলাকার লোকজন। কারণ, এর আগে পুলিশ, কেন্দ্রীয় বাহিনীর সামনে এসে পড়েছে একের পর এক ঢিল। তাতে পুলিশ ও নিশ্চিত ভূতে নয়, মানুষই মারছে ঢিল! একাধিকবার রাতের অন্ধকারে অভিযান, শাসানি, ধমকানি, গ্রেপ্তার করার হুমকি তারপরেও বন্ধ হয়নি ঢিলের অত্যাচার। পিছনে বালি পাচারকারীদের হাত থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ।
সরকার পাড়া গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে যমুনা নদী। নদী থেকে বালি পাচার বন্ধ করতে সরব হয়েছিল গ্রামেরই কয়েকটি পরিবার। জেলাশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করার পর পাচার বন্ধ করতে সক্রিয় হয়ে ওঠে পুলিশ এবং ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তরের আধিকারিকরা। অভিযোগ, বালি পাচার বন্ধ হয়েছে। আর তারপরেই শুরু হয়েছে ঢিলের অত্যাচার। আতঙ্কে রাতের পর রাত জেগে অসুস্থ হয়ে পড়েন আক্রান্ত পরিবারের সদস্য মীনা রায় (৫০)। ১ জুলাই তাঁর মৃত্যু হয়।
স্বামী গজেন রায় জানান, কয়েকজনের নামে অভিযোগ করেছিলেন। পুলিশ তাদের ধরলেও অভিযুক্তদের বাড়ির মহিলাদের বাধায় পুলিশ তাদের থানায় নিয়ে যেতে পারেনি। এবার তাঁর ও তাঁর ছেলের নামে হুমকিপত্র পাঠাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। রাহুল রায়ের মামা নীলকমল রায় জানান, বৃহস্পতিবার রাত আটটা নাগাদ ঢিল পড়তে শুরু করে। ঢিলের গায়ে সেলোটেপ দিয়ে আটকানো ছিল কাগজের টুকরো। তাতে ভাগ্নে রাহুলকে উল্লেখ করে লেখা রয়েছে, “তোর বাবা মারা যাবে, কিছু করতে পারবি না।” আতঙ্কে রাত কাটিয়েছেন তাঁরা। শুক্রবার সকালে থানায় এসে তদন্তকারী পুলিশ অফিসারকে গোটা ঘটনা জানান নীলকমল। ঢিলে বাঁধা কাগজের টুকরোও দেখান তিনি। জানান, পুলিশ আশ্বাস্ত করেছে। দেখা যাক কি হয়। কোতোয়ালি থানার আইসি অর্ঘ্য সরকার জানান, পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। দ্রুত অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা করবে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.