ধীমান রায়, কাটোয়া: প্রত্নতাত্ত্বিকরা এই এলাকায় খননকার্য চালিয়ে হদিশ পেয়েছিল চার হাজার বছরের প্রাচীন সভ্যতার। তারপর থেকে আউশগ্রাম দুই ব্লকের পাণ্ডু রাজার ঢিবি ভারতীয় প্রত্নতাত্বিক সর্বেক্ষণ সংস্থা অধিগ্রহণ করে। কিন্তু ১৯৮৫ সালে শেষবারের মতো খননের পর থেকে ক্রমেই অবহেলায় পড়ে রয়েছে এই এলাকা। ইতিহাস খ্যাত পাণ্ডু রাজার ঢিবির চারপাশের সীমানাপ্রাচীরের একাংশ ভেঙে পড়ায় অবাধে গবাদি পশু ঢুকে পড়ছে। ইতিমধ্যে পাণ্ডু রাজার ঢিবির কিছু পুরনো ঐতিহাসিক মূর্তিরও হাতসাফাই হয়ে গিয়েছে। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। পাণ্ডুরাজা প্রত্ন গবেষণা কেন্দ্রের সম্পাদক রাধামাধব মণ্ডল ঐতিহাসিক এই সম্পদের সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ ও একটি সংগ্রহশালার দাবি জানিয়ে মহকুমা শাসকের সঙ্গে দেখা করে একটি দাবিপত্র তুলে দেন। পূর্ব বর্ধমান (সদর) মহকুমা শাসক পুষ্পেন্দু সরকার বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। আউশগ্রাম ২ বিডিওকে নির্দেশ দিয়েছি যাতে পঞ্চায়েত সমিতির কোনও তহবিল থেকে সীমানা প্রাচীরের ভেঙে পড়া অংশ মেরামত করে দেওয়া হয়।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আউশগ্রাম ২ ব্লকের রামনগর পঞ্চায়েত এলাকার পাণ্ডুক গ্রামে বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে পাণ্ডু রাজার ঢিবি। পুরো এলাকা ভারতীয় পুরাতাত্ত্বিক বিভাগ থেকে অধিগ্রহণ করা হয়েছিল অর্ধশতাব্দীকাল আগে। তার কাঁটা দিয়ে ঘেরা রয়েছে পুরো এলাকা। কিছু অংশে পাঁচিল তুলে দেওয়া হয়েছিল। তিন ধাপে এই এলাকায় খননকার্য চালায় ভারতীয় পুরাতাত্বিক বিভাগ। ১৯৬২ সালে প্রথম দফায় হয় খননকাজ। ১৯৮৫ সাল নাগাদ শেষবারের মতো খননকাজ হয়েছিল। পাণ্ডুরাজা প্রত্ন গবেষণাকেন্দ্রের সম্পাদক রাধামাধব মণ্ডল বলেন, “তিন ধাপে খননকাজ চালিয়ে প্রাগৈতিহাসিক আমলের অসংখ্য মাটির পাত্র, পশু হাড়ের তৈরি মালা, অলঙ্কার, ৭ টি নরকঙ্কাল, ১৪-১৫ টি মাটির মূর্তি, ধাতব অস্ত্রশস্ত্র-সহ বহু নির্দশন পাওয়া গিয়েছিল এখানে। যেগুলি দফতরের হেফাজতে রয়েছে। ওই নিদর্শনগুলি নিয়ে এলাকায় একটি সংগ্রহশালা করলে পর্যটকদের কাছে পাণ্ডুরাজার ঢিবির আকর্ষণ বেড়ে যেত।”
আরও জানা গিয়েছে, তিনদিন আগে একটি গাড়ির ধাক্কায় পাণ্ডুরাজার ঢিবির সীমানাপ্রাচীর ভেঙে যায়। স্থানীয়রা অবশ্য জানান, আগে থেকেই ঘেরা জায়গার ফাঁক গলে গরু, ছাগল ঢুকে পড়ত এখানে। পাঁচিল ভেঙে যাওয়ার পর অবাধে গবাদিপশু ঢুকছে এখন। রাধামাধববাবুর অভিযোগ, পুরাতাত্ত্বিক বিভাগ থেকে একজন রক্ষী রেখে দেওয়া হলেও তিনি সবদিন আসেন না। ফলে পাণ্ডুরাজার ঢিবির এলাকায় পড়ে থাকা পুরনো মূর্তিও চুরি হয়ে যাচ্ছে। তাই প্রশাসনের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। এছাড়া সংগ্রহশালা তৈরির প্রস্তাব নিয়ে পুরাতাত্ত্বিক বিভাগের কাছে সুপারিশ করা হবে বলেও মহকুমা শাসক জানান।
[আরও পড়ুন: বিনা নোটিসে ঝটিকা সফরে সিঙ্গুরে রাজ্যপাল, অসন্তুষ্ট তৃণমূল]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.