ধীমান রায়: অর্ধশতাব্দীকাল আগে খনন কাজ কিছুটা হয়েছিল৷ তারপর থেকে আর উৎখননের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি৷ তাই আউশগ্রামে পাণ্ডুরাজার ঢিবি খনন করে প্রাচীন সভ্যতা সন্ধানের আর্জি জানিয়েছেন এলাকাবাসী৷ স্থানীয়দের দাবি, পাণ্ডুরাজার ঢিবি খনন করে উদ্ধার হওয়া প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশনগুলি নিয়ে একটি সংগ্রহশালা এলাকায় তৈরি করা হোক৷ তাতে পর্যটকদের কাছে এই এলাকার গুরুত্ব বাড়বে৷ গবেষকদের কাছেও আগ্রহের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে ওই নিদর্শনগুলি৷
আউশগ্রাম ২ নং ব্লকের রামনগর পঞ্চায়েত এলাকায় পাণ্ডুক গ্রামের উত্তর দিকে একটি পুকুর পাড়ে উঁচু ঢিবি আছে৷ এই ঢিবিই পাণ্ডুরাজার ঢিবি নামে পরিচিত৷ স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৬২ সালে এই জায়গাটি অধিগ্রহণ করে প্রথম খনন কার্য শুরু করে ভারতীয় পুরাতাত্ত্বিক বিভাগ৷ প্রথম পর্বেই তখন বেশ কয়েকটি মানব কঙ্কাল উদ্ধার হয়েছিল৷ তারপর ১৯৬৩ সাল থেকে ১৯৬৫ পর্যন্ত চার দফায় খনন কার্য চালায় পুরাতাত্ত্বিক বিভাগ৷ পাওয়া গিয়েছিল অজস্র প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশন৷ তার মধ্যে ছিল তামার পাত্র, অলঙ্কার, হাড়ের তৈরি বর্শাফলক, মৃগশৃঙ্গ, তিরের অগ্রভাগ, মাটির পাত্র, পশুর হাড়ের বানানো নানা জিনিসপত্র, মাছ ধরার বঁড়শি৷ ওই সময়ের কিছু সিলমোহরও পাওয়া যায়৷ পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জানা যায় সম্ভবত সেগুলি ছিল ভূমধ্যসাগরের ক্রীট দ্বীপ থেকে আনা৷ সে সমস্ত নিদর্শন পুরাতাত্ত্বিক বিভাগের হেফাজতেই রয়েছে৷ কিন্তু ১৯৬৫ সালের পর থেকে পাণ্ডুরাজার ঢিবি উৎখননের কাজ এ যাবৎকাল থমকে রয়েছে৷
স্থানীয়রা জানান, পাণ্ডুরাজার ঢিবি সম্পর্কে আগ্রহ বাড়াতে এবং গবেষণার উদ্দেশে কয়েকজন উদ্যোগী হয়ে একটি কমিটি গঠন করেছেন৷ কমিটির সম্পাদক রাধামাধব মণ্ডল জানান, “সে সময় উদ্ধার হওয়া নিদর্শনগুলি এলাকার অধিকাংশ মানুষ তখন চোখেও দেখতে পাননি৷ আমরা পুরাতাত্ত্বিক বিভাগের কাছে আবেদন জানিয়ে ওগুলির ফটোকপি জোগাড় করেছি৷ এই সমস্ত ফটোকপি দিয়ে প্রদর্শনীশালাও করা হয়েছে৷ আমরা চাই উৎখননের কাজ সম্পূর্ণ হোক৷ পুরাতাত্ত্বিক বিভাগকেও এ নিয়ে চিঠি করা হয়েছে৷” পুরাতাত্ত্বিক বিষয়ের গবেষক আদিত্য মুখোপাধ্যায়ের কথায় “উৎখননের কাজ সম্পূর্ণ হলে এখানে হরপ্পা মহেঞ্জোদরোর মতোই এক ভিন্ন সুপ্রাচীন সভ্যতার পরিচয় পাওয়া যাবে৷ হাজার হাজার বছর পুরনো এক অতীতকে যা চিহ্নিত করবে৷ এলাকার তো বটেই, দূরদূরান্তের দেশ-বিদেশের মানুষ তার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাবেন৷ তাই একাধিকার পুরাতাত্ত্বিক বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে৷’’ আদিত্যবাবু বলেন, “অজয় নদের তীরবর্তী এলাকায় হাজার হাজার বছর আগেও জনবসতি থাকার প্রমাণ মিলেছে৷ দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল থেকে আউশগ্রাম পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় মাটিরতলা থেকে বিভিন্ন সময়ে তার নিদর্শনও উদ্ধার হয়েছে৷” তাই বিশদ জানতে উৎখনন ও গবেষণা জরুরি৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.