ধীমান রায়, কাটোয়া: আউশগ্রামের রামনগর পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান ভোটের ফল ঘোষণার পর থেকে বিজেপির অত্যাচারের ভয়ে গ্রামছাড়া হয়েছিলেন৷ জনরোষের মুখেও পড়েছিলেন গুসকরা ২ পঞ্চায়েতের প্রধান সুবীর মণ্ডল৷ এবার বিরোধীশূন্য পঞ্চায়েতের প্রধান নিজের গ্রামেই একঘরে হয়ে রয়েছেন। তারপর দু’সপ্তাহ ধরে তাঁকে কার্যত বয়কট করে রেখেছেন গ্রামবাসীরা।বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জনমজুরি। এমনকী সুবীরবাবুর ট্রাক্টরের চালকও তাঁর কাজে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পঞ্চায়েতের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই প্রচুর টাকা তছরুপ করেছেন সুবীরবাবু। দাবি, সেইসব হিসেব জনসমক্ষে পেশ করে ফেরত দিতে হবে। যদিও সুবীরবাবুর দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে সিপিএম-ই লোকজন উসকে দিয়ে অশান্তি ছড়াচ্ছে। কয়েকদিন আগেই পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন সুবীরবাবুর স্ত্রী। আউশগ্রাম ১ ব্লকের গুসকরা ২ পঞ্চায়েতের প্রধান সুবীর মণ্ডলের বাড়ি নওয়াদা গ্রামে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৩ মে লোকসভা ভোটের ফল ঘোষণার পরই স্থানীয় গ্রামবাসীরা সুবীরবাবুর বাড়ির সামনে গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। স্থানীয়রা প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তাঁর কাছে পঞ্চায়েতের উন্নয়নের টাকা খরচের হিসাব চান। সেইসঙ্গে সরকারি আবাস যোজনার অনুদান থেকে উপভোক্তাদের কাছে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগও তোলেন স্থানীয়রা।
সুবীরবাবুর অভিযোগ, ‘ওইদিন সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরা আমার বাড়িতে চড়াও হয়ে পাঁচিল টপকে ঘরে ঢোকে। তারপর আমার স্ত্রীকে ও ছেলেকে বের করে দেয়। খুনের হুমকি দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ যায়। তার মধ্যে ওরা পালিয়ে গিয়েছিল৷ তবে যাওয়ার আগে ভাঙচুর করে ওরা।’ জানা গিয়েছে, ওইদিনের ঘটনায় সুবীরবাবুর স্ত্রী মানসী মণ্ডল পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্যে নওয়াদা গ্রামে কয়েকবার অভিযানও চালায়। সুবীরবাবু বলেন, ‘ভোটের ফলপ্রকাশের পর সিপিএমের লোকজনই বিজেপির পতাকা হাতে গ্রামে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ওরা আমার বাড়িতে কাউকে কাজে আসতে দিচ্ছে না। ট্রাকটরের চালককে ভয় দেখিয়ে কাজে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। আমাকে একঘরে করে দিয়েছে। চাষের কাজ শুরু করতে পারছি না।’
যদিও সুবীরবাবু জানিয়েছেন, তিনি পঞ্চায়েত অফিসে নিয়মিত যাচ্ছেন। সিপিএমের পূর্ব বর্ধমানের জেলা কমিটির সদস্য আলমগির মণ্ডল নওয়াদা গ্রামেরই বাসিন্দা। তাঁর কথায়, ‘শুনেছি প্রধানের বিরুদ্ধে এলাকার মানুষ ক্ষোভে ফুঁসছেন। আসলে এটা ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে সুবীরবাবুরাই আমাদের বহু কর্মীদের বাড়িতে হামলা করেছিলেন। ঘরবাড়ি ভাঙচুর করেছিলেন। পাশাপাশি তৃণমূলের প্রধান ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে অনেক টাকা তছরুপ করেছেন। তার সঙ্গে সরকারি আবাস যোজনায় উপভোক্তাদের কাছ থেকে ২০ হাজার, ২৫ হাজার টাকা করে কাটমানি নিয়েছে।’
আউশগ্রাম ২ ব্লকের রামনগর পঞ্চায়েতের প্রধান সঞ্জিত বিশ্বাসও ভোটের ফল ঘোষণার পর থেকেই এলাকাছাড়া। তাঁর আশঙ্কা, গ্রামে এলে বিজেপির হাতে আক্রান্ত হতে পারেন। বর্তমানে ছেলেমেয়েকে নিয়ে এলাকা থেকে ফেরার ছোড়া কলোনির বাসিন্দা সঞ্জিতবাবু। যে আউশগ্রামের ১৪টি পঞ্চায়েতের একটি আসনেও বিরোধী নেই, সেখানে লোকসভা ভোটে গেরুয়া শিবিরের উত্থানে কার্যত কোণঠাসা শাসকদল।
ছবি: জয়ন্ত দাস।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.