রাজ কুমার, আলিপুরদুয়ার: কেএলও (KLO) সুপ্রিমো তমির দাস ওরফে জীবন সিংহের উলটো সুর তাঁর গ্রাম উত্তর হলদিবাড়িতে। শুক্রবারই ভিডিও বার্তায় একাধিক বিজেপি নেতা মন্ত্রীর নাম করে পঞ্চায়েত ভোটে (Panchayat Election) তাঁদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছিলেন কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশনের প্রধান। কিন্তু তাঁর দুই নিকট আত্মীয় এবার কুমারগ্রামে নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। একজন গত পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপির জেতা পঞ্চায়েত সমিতির আসনে দাড়িয়ে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছেন বিজেপিকে। ভোটে তাঁর প্রতীক চিহ্ন গোলাপ ফুল। আর এতেই উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে পদ্ম শিবির। কার্যত এই আসনে পদ্মের কাঁটা হয়ে দাড়িয়েছে জীবনের আত্মীয়ের প্রতীক গোলাপ। কুমারগ্রাম (Kumargram) পঞ্চায়েত সমিতির উত্তর হলদিবাড়ির এই আসনে এবার গোলাপ ফুল চিহ্ন নিয়ে নির্দল প্রার্থী হয়েছেন জীবন সিংয়ের ভাইয়ের বউ কলিতা দাস। এই আসনে লড়াই এবার চতুর্মুখী। এখানে বিজেপি, তৃণমূল ও বামেদের প্রার্থী রয়েছে। এখানে তৃণমূলের কাঞ্চন সরকার, বিজেপির নলিত দাস ও বামেদের আরএসপি প্রার্থী মিলেশ্বর দাস।
অন্যজন গ্রাম পঞ্চায়েতের (Gram Panchayat) প্রার্থী হয়েছেন। কুমারগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতে লাঙল চিহ্নে নির্দল প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়িয়েছেন জীবন সিংয়ের বড় দিদি ফুলমতি দাসের মেয়ে মণিকা দাস। এই গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনেও ভোটের লড়াই চতুর্মুখী। এখানে তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) প্রার্থী নীলমতি দাস, বিজেপি (BJP) প্রার্থী শেফালি বর্মন ও বামেদের আরএসপি প্রার্থী অঞ্জনা দাসের সঙ্গে লড়াই জীবনের আত্মীয়ার।
এই দুই আসনেই জীবনের নিকট আত্মীয়রা হলুদ গামছা গলায় নিয়ে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। এই দুই প্রার্থীর সমর্থনে জীবনের অন্যান্য আত্মীয়রাও শামিল হয়েছেন। তবে জীবনের সঙ্গেই রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা। কুমারগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির (Panchayat Samiti) প্রার্থী জীবনের নিকট আত্মীয় কলিতা বলেন, “ভোটে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত বাড়ির বড়দের। দিল্লির সঙ্গে ওর (জীবন সিংহ) শান্তি চুক্তির প্রক্রিয়া চলছে। তা ভালভাবে সম্পন্ন হোক। কিন্তু ভারতভুক্তির চুক্তি অনুসারে কোচবিহার রাজ্যের সম্মান পুনরুদ্ধারের বার্তা নিয়েও আমার এই লড়াই।” সশস্ত্র আন্দোলনের পথ যে পছন্দ নয়, তাও জানিয়েছেন কলিতা। একই সুরে কথা বলেছেন গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রার্থী জীবনের আরেক নিকট আত্মীয় মণিকা দাস।
তবে দুই আসনেই এই দুই নির্দল প্রার্থীকে আমল দিচ্ছে না তৃণমূল ও বিজেপি। তৃণমূল কংগ্রেসের পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী কাঞ্চন সরকারের বক্তব্য, “এই আসনে বিজেপি গত পঞ্চায়েত ভোটে জিতে উন্নয়নের কোনও কাজ করতে পারেনি। সেই কারণে আমার লড়াই বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে। এবার আমার জয় কেউ আটকাতে পারবে না। মানুষ বিজেপিকে চিনে গিয়েছে।” আবার এই পঞ্চায়েত সমিতির বিজেপি প্রার্থী নলিত দাস বলেন, “তৃণমূল মানেই দুর্নীতি ও চুরি। মানুষ এটা বুঝে গেছে। সেই কারণে ভোটে আমিই জিতব। আমার কাছে অন্য কেউ কোনও ফ্যাক্টর নয়।”
উল্লেখ্য আটের দশকের পর থেকেই আলাদা রাজ্য কামতাপুরের দাবিতে একদল যুবক হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন (KLO) গড়ে সশস্ত্র আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল কুমারগ্রামের অসম সীমানা লাগোয়া উত্তর হলদিবাড়ি গ্রাম। এই গ্রামের ছেলে তমির দাস ওরফে জীবন সিংহ হয়ে উঠেছিলেন কেএলও সুপ্রিমো। জীবনের সঙ্গে সেসময় এই গ্রামের আরও একঝাঁক তরুণ-তরুণী হাতে অস্ত্র নিয়ে বাড়ি ছেড়েছিলেন। সেই গ্রামেও এখন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শামিল হচ্ছেন সশস্ত্র আন্দোলনে শামিল হওয়া সেই সব ঘরের ছেলেমেয়েরা। কেউ সরাসরি ভোটে দাঁড়িয়ে লড়াই করছেন। আবার কেউ ভোট দিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মূল স্রোতে থাকাকেই শ্রেয় মনে করছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.