ফাইল ছবি।
সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: পঞ্চায়েত ভোটে নন্দীগ্রামে ১০ হাজারের বেশি ব্যবধানে হারের পর তৃণমূল নেতা-কর্মীদের উপর কুৎসিত আক্রমণ শুরু বিজেপির। বহিরাগত কুখ্যাত দুষ্কৃতীদের ডেকে এনে বিজেপি জিতেছে এমন গ্রামগুলিতে তৃণমূল কর্মী ও সমর্থকদের উপর ভয়ংকর হামলা শুরু করেছে। বিশেষ করে ভেকুটিয়া, সোনাচূড়া, আমদাবাদ, বয়াল ২ ও গোকুলনগরে বিজেপির তাণ্ডব বেশি বলে তৃণমূলের অভিযোগ। খেজুরি ২ ব্লকের দেখালিতেও নিরীহ তৃণমূলকর্মীদের উপর চড়াও হয়েছে বিজেপির দুষ্কৃতীরা। একের পর এক ঘরবাড়ি ও দোকানপাট ভেঙে দিয়ে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যাচ্ছে গেরুয়া-গুণ্ডারা। গোটা ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত গুরুতর জখম হয়েছে ২৭ জন। এর মধ্যে ১৪ জনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাদের নিয়ে এসে কলকাতার পিজি হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে। আক্রান্তদের চিকিৎসার বিষয়টি তত্ত্বাবধান করছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নন্দীগ্রাম থেকে আসা আক্রান্তদের পিজিতে ভরতির তদারকি করেন দুই মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও শশী পাঁজা এবং তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ।
পিজিতে ভরতি হওয়া গুরুতর জখম তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে একজন জয়ী মহিলা প্রার্থী রয়েছেন। তাঁকে শুভেন্দু অধিকারী ডাকছেন এবং বিজেপিতে যোগ দিতে হবে বলে হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। হাসপাতালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ অভিযোগ করেন, “বিজেপিতে যোগ না দিলে ওই জয়ী মহিলাকে ধর্ষণ করা হবে বলে গেরুয়া গুন্ডারা ভয় দেখিয়েছিল। মানসিকভাবে চরম বিধ্বস্ত ওই জয়ী প্রার্থী এখনও প্রবল আতঙ্কে রয়েছেন। শুধু তাই নয়, জয়ী অনেক তৃণমূল প্রার্থীর সার্টিফিকেট ছিনতাই করার চেষ্টা করেছিল বিজেপি। কিন্তু শরীরে গুরুতর আঘাত নিয়েও সেই সার্টিফিকেট বাঁচিয়ে রেখেছেন তৃণমূলের জয়ী প্রার্থীরা।” পুলিশের কাছে গোটা ঘটনার বিবৃতি দেন ওই জয়ী মহিলা। সূত্রের খবর, পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশের একটি টিম রাতেই পিজিতে আসছে আক্রান্ত ১৪ জনেরই বয়ান সংগ্রহ করতে। সাংবাদিক বৈঠকে কুণালের পাশে দাঁড়িয়ে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং ডা. শশী পাঁজা অভিযোগ করেন, যাঁদের ভরতি করা হল তাঁদের কারও হাত ভেঙেছে, কারও পা ভেঙেছে, বুকের পাঁজড়ের হাড়ও ভেঙে গিয়েছে। মাথা ফেটেছে কয়েকজনের। এদিন পিজিতে ট্রমা কেয়ার সেন্টারে ভরতির পাশাপাশি ১৪ জনকেই পোশাক কিনে দেওয়া হয় তৃণমূলের তরফে। কারণ, রক্তমাখা জামাকাপড় শরীরে রাখা যাচ্ছিল না। এছাড়াও সকলকে দলের তরফে হরলিক্স এবং বিস্কুটও দেওয়া হয়। তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ, বিধানসভা ভোটে লোডশেডিং করে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের প্রভাব খাটিয়ে ১৯৫৬ ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারানোর গল্প মিথ্যা হয়ে যাওয়ায় হারের জ্বালায় বিজেপি এই সন্ত্রাস চালাচ্ছে।
পঞ্চায়েতে ফল প্রকাশের বিজেপির সন্ত্রাসে তৃণমূলের যারা ঘরছাড়া হয়েছেন তাদের নিয়ে এসে নন্দীগ্রাম ১ দলীয় অফিসে রেখে খাওয়া ও চিকিৎসা-সহ যাবতীয় ব্যবস্থা করেছে দল। পুলিশের একাংশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ করেছে তৃণমূল। যদিও জেলা পুলিশের তরফে দাবি, ইতিমধ্যে বিজেপির মদতপুষ্ট ৫ জন কুখ্যাত দুষ্কৃতীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার জেরে আজ, শুক্রবার নন্দীগ্রাম যাচ্ছেন শিল্পমন্ত্রী ডা. শশী পাঁজা ও তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ-সহ তৃণমূলের এক প্রতিনিধিদল। শশী-কুণালরা নন্দীগ্রামে প্রতিবাদ মিছিলের পাশাপাশি ঘরছাড়াদের ঘরেও ফিরিয়ে দেবেন। তৃণমূলের অভিযোগ, কয়েকটি পঞ্চায়েতে জিতলেও সামগ্রিকভাবে ১০,৪৫৭ ভোটে নন্দীগ্রামে পিছিয়ে পড়ে প্রতিহিংসার পথ ধরেছে বিজেপি। মঙ্গলবার ভোট গননার রাত থেকে তারা তৃণমূল কর্মীদের মারধর,বাড়ি লুঠপাট, ভাঙচুর শুরু করেছে । এক মহিলাকে গাছে বেঁধে মারধরের অভিযোগ করেছে তৃণমূল। গত দু’দিন ধরে নন্দীগ্রাম ২-এর বয়াল-২ অঞ্চলের রামচকে তৃণমূল নেতা-কর্মীর বাড়ি বেছে বেছে তাণ্ডব চালিয়েছে বিজেপি কর্মীরা। বাড়ির ধান,চাল,দামি জিনিস থেকে হাঁস-মুরগি পর্যন্ত লুঠ হয়েছে বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত এলাকায় ৬০টি বাড়িতে লুঠপাট হয়েছে বলে অভিযোগ। ভাঙচুর করেছে ১০টি বাড়ি। বয়ালের গ্রাম ছেড়ে ৩০ জন তৃণমূল নেতা-কর্মী পার্টি অফিসে আশ্রয় নিয়েছেন। নন্দীগ্রাম ১ ব্লকের সোনাচূড়া ও গোকুলনগর এলাকায় বিজেপি কর্মীদের তাণ্ডব আরও বেশি বলে অভিযোগ । ভোট গননার রাতেই নন্দীগ্রাম এক নম্বর ব্লকের ভেকুটিয়ায় বিজেপি কর্মীদের মারে তৃণমূলের ১২ জন কর্মী,সমর্থক জখম হয়েছেন। নন্দীগ্রাম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে বেশ কয়েকজন জখম চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ছুটিতে যাওয়া নন্দীগ্রাম থানার আইসি সুমন রায়চৌধুরী কাজে যোগ দিয়েই হামলাকারীদের সন্ধানে তল্লাশি চালাচ্ছেন। জেলার পুলিশ সুপার অমরনাথ নিজেই নন্দীগ্রাম থানায় বসে বিজেপির হামলাকারীদের সন্ধানে অভিযান নিয়ে মনিটরিং করছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.