সৈকত মাইতি, তমলুক: ব্যালট বাক্সে কারচুপি, নিরাপত্তার অভাবের অভিযোগকে কেন্দ্র করে দফায়-দফায় উত্তপ্ত হয়ে উঠল পূর্ব মেদিনীপুরের একাধিক এলাকা। রবিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নন্দকুমারের শ্রীকৃষ্ণপুর-সহ তমলুকের নাইকুড়ি ব্লক এলাকায় দফায়-দফায় পথ অবরোধ, বিক্ষোভের জেরে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় গোটা এলাকা। বিক্ষোভকারীদের ইটবৃষ্টি, তাণ্ডব সামাল দিতে লাঠি চালায় পুলিশ। বেশ কয়েকজনকে আটক হয়েছে। এদিকে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের মারে গুরুতর জখম হয়েছেন তমলুক শহর তৃণমূলের সভাপতি। তাঁর বাইকও জ্বালিয়েও দেওয়া হয়েছে।
রবিবার সন্ধেয় তমলুকের নাইকুড়িতে স্ট্রং রুমের পিছনের দরজা খোলা থাকার খবর ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজনা তৈরি হয়। বিজেপির অভিযোগ, স্ট্রংরুমের ভিতরে শাসকদলের লোক ঢুকিয়ে ব্যালট বাক্সে কারচুপি করা হচ্ছে। তমলুক শহর তৃণমূলের সভাপতি চঞ্চল খাড়াকে বেধড়ক মারধর করা হয়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় তাঁর বাইক। তাঁকে উদ্ধার করে তাম্রলিপ্ত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে তীব্র ক্ষোভের মুখে পড়ে পুলিশ। শুরু হয় ইটবৃষ্টি, বোমাবাজি। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় স্ট্রং রুমের সামনে। রাত পর্যন্ত দফায় দফায় বিজেপি ও পুলিশের খন্ডযুদ্ধে বেশ কয়েকজন বিজেপি কর্মী সমর্থক জখম হয়েছেন। কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ।
বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি আশিস মণ্ডলের অভিযোগ, জনরায় বুঝতে পেরে তৃণমূল এখন ভাঙচুর করে লুটের পরিকল্পনা করছে। মানুষ এই ভোট লুট, চুরি আটকে দিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। যদিও তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র বলেন, “শুধুমাত্র মিথ্যে অভিযোগে চারিদিকে অশান্তি বাঁধeনের চেষ্টা করছে বিরোধীরা।” তাঁর দাবি, তমলুক ব্লকের নির্বাচনী অবজারভার হিসাবে দায়িত্বে থাকা শহর তৃণমূলের সভাপতি চঞ্চল খাড়া, এদিন কাউন্টিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণের জন্য পার্টি অফিসে যাচ্ছিলেন। সে সময় তাঁকে ঘিরে ধরে মারধর করা হয়েছে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার বহু বুথে ভোট পর্ব (Panchayat Poll) মিটিয়ে উঠতেই প্রায় মধ্যরাত হয়ে গিয়েছিল। নন্দকুমারের খঞ্চি, কাঁথি দেশপ্রাণ ব্লকের ডিঙ্গলবেরিয়া বুথে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হয়েছে। এরপর বুথ কেন্দ্র থেকে নির্দিষ্ট গণনা কেন্দ্রে সিল করা ব্যালট বক্সগুলি নিয়ে আসার তোড়জোড় শুরু হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে স্ট্রংরুম পর্যন্ত ব্যালট বাক্স গুলি নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তার দাবিতে অনড় থাকে বিরোধীরা। এর ফলে পাঁশকুড়া -১ ব্লকের রঘুনাথবাড়ি অঞ্চলের অন্তর্গত সরস্বত্যা, তমলুকের উত্তর সোনামুয়ী সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তিক উত্তেজনা তৈরি হয়। আর সেই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠে স্ট্রংরুম গুলিতে ব্যালট বাক্সগুলি এসে পৌঁছলেও সেখানেও নতুন করে কারচুপির অভিযোগ তুলে দফায়-দফায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা।
নন্দকুমারের শ্রীকৃষ্ণপুর হাই স্কুলে স্ট্রংরুমে রাতের অন্ধকারে কারচুপি করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে এদিন সকালে হলদিয়া মেচেদা রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন প্রায় কয়েকশো বিজেপি কর্মী সমর্থক। রাস্তার মাঝে টায়ার জ্বালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। আর খবর পেয়ে সেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ এলে তাদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখানো হয়। পরবর্তী ক্ষেত্রে বিশাল পুলিশ বাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে খন্ডযুদ্ধ বেঁধে যায়। লাঠিচার্জ করতে হয় পুলিশকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.