শাহাজাদ হোসেন, ফরাক্কা: সামশেরগঞ্জ থানার তিনপাকুরিয়া-বাবুপুরে কংগ্রেস কর্মী আরিফ শেখের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় তৃণমূল বিধায়ক আমিরুল ইসলাম-সহ ৪ জনের পুলিশে লিখিত অভিযোগ করলেন যুবকের মা। ইতিমধ্যেই আটক করা হয়েছে আশরাফুল হক নামে তৃণমূল কংগ্রেসের বুথ সভাপতিকে। তিনি তিনপাকুরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ৮৪ নম্বর বুথের তৃণমূল কংগ্রেসের বুথ সভাপতি। এদিকে সোমবার সকালে হাসপাতালে গিয়ে গুলিবিদ্ধ যুবকের সঙ্গে দেখা করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী।
পঞ্চায়েত ভোটকে কেন্দ্র করে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অশান্তির খবর প্রকাশ্যে আসছে। চলছে গুলি। রবিবার রাতে মুর্শিদাবাদে গুলি চলে। আহত হন এক যুবক। অভিযোগ ওঠে তৃণমূল বিধায়ক আমিরুল ইসলাম গুলি চালিয়েছেন। বর্তমানে হাসপাতালে ভরতি ওই যুবক। এদিন তাঁকে দেখে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে অধীররঞ্জন চৌধুরী জানান, “আরিফের সেন্স আছে। আমাকে চিনতে পেরেছে। কিন্তু কথা বলতে পারছে না। মেরুদণ্ডে গুলি আটকে আছে। এই মূহুর্তে গুলি বের করা বিপজ্জনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। একজন তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক গুলি করেছেন, এটা খুব দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। গুলিবিদ্ধ কংগ্রেস কর্মীর জবানবন্দি নেওয়ার জন্য পুলিশকে দাবি জানাছি। সে এখনও বেঁচে আছ। সে নিজেই বলছে বিধায়ক আমিরুল ইসলাম তাঁকে গুলি করেছে।”
সোমবার সকাল থেকে বিধায়ক আমিরুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের দাবিতে কংগ্রেস কর্মীরা দফায় দফায় বৃষ্টি উপেক্ষা করে সামশেরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভে শামিল হয়। এদিন দুপুরে সামশেরগঞ্জ ব্লক কংগ্রেস সভাপতি ইমাম হোসেন ও ৪ নম্বর জেলা পরিষদের প্রার্থী আনারুল হক বিপ্লবের নেতৃত্বে কংগ্রেস কর্মীরা সামশেরগঞ্জ থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখায়। বিক্ষোভ সভায় উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ মালদহের সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী ও আইনজীবী কৌস্তব বাগচী। সামশেরগঞ্জ থানায় বিধায়ক আমিরুল ইসলাম, আতাউর রহমান, জাকির হোসেন, শহিদূল হক-সহ চারজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন গুলিবিদ্ধ আরিফ শেখের মা ওহিদা বিবি। আরিফের ভাই আবদুল হামিদ এদিন দাবি করে, “বিধায়ক আমিরুল ইসলাম বিপ্লবকে গুলি করতে যাচ্ছিল তখন আমার ভাইকে গুলি লাগে। আমিরুলের গ্রেপ্তার চাই। শাস্তি চাই।” এদিকে আনারুল হক বিপ্লব বলেন, “আমি মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দপ্তরের কর্মাধ্যক্ষ ছিলাম। যেদিন থেকে তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছি সেদিন থেকে আমাকে বারবার প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাকে মিথ্যে মামলাতে ফাঁসানোর চক্রান্ত করছেন স্থানীয় বিধায়ক আমিরুল ইসলাম। রবিবার রাতে আমাকে লক্ষ্য করেই গুলি চালানো হয়েছিল। কিন্তু সেই গুলি লাগে আমাদের এক কর্মীর পেটে।”
যদিও এদিন সামশেরগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক আমিরুল ইসলাম জানান, “আমার স্বচ্ছ ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করছে কংগ্রেস। আমার কাজ লোকের প্রাণ বাঁচানো। আমি কোনও অপরাধী নই। গতকাল রাতে আমার উপরেই কংগ্রেসের দুষ্কৃতীরা হামলা ও গুলি চালায়। আমার গাড়ি ভাঙচুড় করা হয়েছে। কোনওক্রমে আমার দেহরক্ষীরা সেখান থেকে আমাকে বের করে আনে।” এদিন সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী ও কৌস্তভ বাগচি সামশেরগঞ্জ থানার পুলিশের সঙ্গে দেখা করেন। থানা থেকে বেড়িয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কৌস্তভ বাগচি জানান, “আমিরুল ইসলাম গুলি করেছে আমাদের কর্মীকে। আমিরুল ইসলাম-সহ চারজন ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.