সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: একেবারে ভাই-ভাই লড়াই! জ্যাঠতুতো দাদা সিপিএম প্রার্থী। খুড়তুতো ভাই তৃণমূলের। পুরুলিয়া (Purulia) জেলা পরিষদের ৩৬ নম্বর আসনে দুই ভাইয়ের লড়াই একেবারে জমজমাট। যদিও এই আসনে লড়াই একেবারে চতুর্মুখী। কিন্তু দুই ভাইয়ের এই প্রথম ভোটের ময়দানে নেমে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করা বেশ নজর কাড়ছে রঘুনাথপুরের এই অংশে। সিপিএম (CPM) প্রার্থীর নাম প্রসেনজিৎ মুখোপাধ্যায়। তৃণমূল (TMC) প্রার্থী অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। প্রসেনজিৎ দাদা, অভিজিৎ ভাই।
দুই ভাইয়ের পরিবার আলাদা থাকে। কিন্তু পারিবারিক সম্পর্ক একেবারে মজবুত। তবে ভোট প্রার্থী হওয়ার পর থেকে দু’জনই একে অপরের সঙ্গে কথা বন্ধ করেছেন, কেমন যেন চুপচাপ (Silent)। বাজারে, পথেঘাটে দেখা হলেও সেভাবে বাক্য বিনিময় হচ্ছে না প্রসেনজিৎ-অভিজিতের। এ থেকেই বোঝা যায়, দাদা-ভাইয়ের রাজনৈতিক লড়াই কোন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। দুই ভাইয়ের রাজনীতিতে হাতেখড়ি সেই কলেজ জীবন থেকে। কিন্তু ভোটের ময়দানে দু’জনেই প্রথম।
৩০ বছর বয়সী প্রসেনজিৎ সিপিএমের যুব সংগঠন ভারতের গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশনের (DYFI) জেলা কমিটির সদস্য। তিনি কেমিস্ট্রিতে স্নাতক। অন্যদিকে, ২৮ বছরের অভিজিৎ রঘুনাথপুর দু’নম্বর ব্লকের যুব তৃণমূল (TMC) সভাপতি। তিনিও রসায়ন নিয়ে স্নাতক হয়েছেন। দুই ভাই যুব প্রার্থী হওয়ায় কে কত বেশি এলাকার যুব ভোট নিজের পক্ষে টানতে পারেন, তার উপর জয়-পরাজয়ের বড় ভূমিকা নির্ভর করবে, তা মানছেন দু’জনেই।
তবে দুই ভাই ভোটযুদ্ধের সঙ্গে পারিবারিক বিষয়টি কোনওভাবে মেশাতে চান না। বড় ভাই অর্থাৎ সিপিএম প্রার্থী প্রসেনজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, “রাজনীতি আলাদা জায়গায়। পরিবার আলাদা জায়গায়। আমি আমার দলের আদর্শ নিয়ে লড়াই করে জিতব।” অন্যদিকে তৃণমূল প্রার্থী অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, “নির্বাচনী লড়াই আলাদা। পরিবার আলাদা। আমরা ভোটে প্রার্থী হওয়ায় দাদার সঙ্গে সেভাবে এখন কথা হচ্ছে না ঠিকই। কিন্তু ভোট প্রার্থী হওয়ার সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের কাজ নিয়ে আমাকে সহজে জয় এনে দেবে।” অন্যদিকে প্রসেনজিৎ বলছেন, “যুব ভোট সবচেয়ে বেশি আমি পাব। এলাকার যুবরা সবাই সিপিএমের পক্ষে রয়েছেন।”
এই জেলা পরিষদে তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত – মঙ্গলদা-মৌ তোড়, জোড়াডি, নতুনডি গ্রাম পঞ্চায়েত বিজেপির দখলে। গতবার এই এলাকার জেলা পরিষদ আসনেও জয়ী হয়েছিল বিজেপি। যদিও জেলা পরিষদের জয়ী বিজেপি প্রার্থী তৃণমূলে যোগদান করেন। ফলে সিপিএম-তৃণমূলের দুই ভাইয়ের লড়াই জমজমাট হলেও এখানে বিজেপিও একটা ফ্যাক্টর। শাসকদল তৃণমূল-সিপিএম যেমন যুবকে প্রার্থী করেছে। তেমনই এই আসনে বিজেপির প্রার্থী যুব মোর্চার জেলা সাধারণ সম্পাদক পরশমণি পাণ্ডে। কিন্তু দুই ভাই প্রসেনজিৎ ও অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, “বিজেপি শুধু এখানে মানুষের কাছে ভোট চাইতে আসে। প্রচারে গিয়ে আমরা এটাই শুনছি।” তবে এই আসনে লড়াইয়ে রয়েছেন কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিইউসির জেলা সভাপতি বলরাম মাহাতোও। তবে দুই ভাইয়ের লড়াই যেন আলাদা ছাপ ফেলেছে এই আসনে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.