রঞ্জন মহাপাত্র, কাঁথি: দীর্ঘ ১৫ বছর পর সর্বসাধারণের জন্যে উন্মুক্ত থাকছে পূর্ব মেদিনীপুর (East Midnapore) জেলা পরিষদের সভাধিপতির আসনটি। সভাধিপতির দৌড়ে এগিয়ে কে? তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। ২০০৮ সালে তফসিলি (SC-ST) পুরুষ থাকায় খেজুরি থেকে জয়ী হয়ে সভাধিপতি হয়েছিলেন রণজিৎ মণ্ডল। ২০১৩ সালে তপশিলি মহিলা সংরক্ষিত থাকায় কাঁথি ১ ব্লক থেকে সভাধিপতি হয়েছিলেন মধুরিমা মণ্ডল। ২০১৮ সালে ওবিসি (OBC) পুরুষের জন্যে সংরক্ষিত থাকায় কাঁথি ১ ব্লক থেকে জয়ী হয়ে সভাধিপতি হয়েছিলেন প্রয়াত দেবব্রত দাস।
কিন্তু এবার অর্থাৎ ২০২৩ সালে কে? যদিও রাজনৈতিক মহলে বেশ কয়েকটি নাম ঘোরাফেরা করছে। সেগুলোর মধ্যে প্রথমেই যাঁর নাম রয়েছে, তিনি তরুণ জানা। এবারের পঞ্চায়েত ভোটে (Panchayat Election) কাঁথি (Kanthi)দেশপ্রাণ ব্লক থেকে জেলা পরিষদের আসনে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। শুধু তাই নয়, দেশপ্রাণ ব্লকে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি যেখানে ৪৯০০ভোটে এগিয়ে ছিল, সেখানে এবার ২১ হাজার ভোটে তৃণমূল এগিয়ে। তাছাড়া তরুণ জানা ২০০৮ এবং ২০১৩ সালে পরপর দক্ষতার সঙ্গে দেশপ্রাণ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি থেকেছেন। ২০১৮সালে মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায় তিনি সহ-সভাপতি হয়েছিলেন।
শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) তৃণমূল ছাড়ার পরে বিরোধী মুখ হিসেবে উঠে আসে এই তরুণ জানার নাম। তাঁঁকে দিঘা শংকরপুর উন্নয়ন পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও করে নবান্ন। যদিও বিধানসভা নির্বাচনে উত্তর কাঁথিতে বিজেপির কাছে পরাজিত হন তরুণ। তাহলেও এলাকায় দলীয় কাজে নিযুক্ত থেকে পঞ্চায়েতে দলের ভোট বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। তাছাড়া পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকে সংরক্ষণের গেরোয় আটকে ছিল সভাধিপতি আসনটি। এবার উন্মুক্ত হওয়ায় সাধারণ শ্রেণি থেকে সভাধিপতি আসনে বসার ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে তরুণ জানার নাম। তাছাড়া কালীঘাটের কাছে তরুণের পরিছন্ন ভাবমূর্তি রয়েছে বলে দলীয় সূত্রে খবর।
অপরদিকে, পাল্লা ভারী বিদায়ী সভাধিপতি উত্তম বারিকের। কারণ, বিধানসভা ভোটের নিরিখে তৃণমূলের পিছিয়ে পড়া আসন খেজুরিতে (হেঁড়িয়া,টিকাশি,লাক্ষী) কঠোর লড়াইয়ের মধ্যে জয়ী হন। তিনি পটাশপুরের বিধায়ক। জেলাস্তরে তাঁর সংগঠন রয়েছে। দলের যে কোনও কাজে নিজেকে এগিয়ে রেখেছেন উত্তম বারিক। দেশপ্রাণ ব্লকে নিজের আসনের বদলে এবার খেজুরি থেকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন। তিনি ২০১৮ সালে দেশপ্রাণ ব্লকের ৫৮নম্বর জেলা পরিষদ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। সভাধিপতি দেবব্রত দাসের মৃত্যুর পরে তাঁর জায়গায় সভাধিপতি নির্বাচিত হন উত্তম বারিক। এবার তিনি প্রার্থী হয়েছিলেন খেজুরি ১ ব্লকের জেলা পরিষদের ৫৫ নম্বর আসন থেকে।
দলীয় সূত্রে খবর, জেলা পরিষদ আসনে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটাতে সভাধিপতি উত্তম বারিককে দেশপ্রাণ ব্লক থেকে নিয়ে গিয়ে তৃণমূল প্রার্থী করা হয়েছিল। তিনি জয়লাভ করেছেন। কংগ্রেস ঘরানা থেকে তৃণমূলে আসা উত্তম বারিক দীর্ঘদিন রাজনীতির সঙ্গে শুধু যুক্ত নন, তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। পাশাপাশি পূর্ব মেদিনীপুর জেলার টেলিটাওয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। ফলে জেলার কয়েক হাজার টাওয়ারের সিকিউরিটি গার্ডের কর্মীরা রয়েছেন উত্তম বারিকের সঙ্গে। কালীঘাটেও উত্তম বারিকের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রয়েছে। ফলে এই নামটিও সভাধিপতি হিসেবে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে।
পাশাপাশি কাঁথি ১ ব্লক থেকে জয়ী আনোয়ার উদ্দিন এবং রামনগর ১ ব্লক থেকে জয়ী শম্পা মহাপাত্রের নামও সভাধিপতির তালিকায় রয়েছে বলে দাবি রাজনৈতিক মহলের। তবে দলীয়ভাবে এবিষয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি হয়নি। আনোয়ার উদ্দিন রাজনীতি নতুন মুখ হলেও কাজু ব্যবসায়ী হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচিত। তাছাড়া জেলার সংখ্যালঘু সংগঠনের সভাপতি রয়েছেন। জেলার সংখ্যালঘু ভোটের কথা মাথায় রেখে এবং জেলায় সংখ্যালঘু সভাধিপতি যাতে কোনবারই হয়নি তাই এই নামটিও অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে। এদিকে শম্পা মহাপাত্র রামনগর ১ পঞ্চায়েত সমিতি দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করেছেন। ফলে তাঁর নামটিও জেলার রাজনৈতিক মহলে ঘোরাফেরা করছে সভাধিপতি হিসেবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.