সুমন করাতি, হুগলি: একটা সময়ে ভোট ঘোষণা হলেই শুরু হয়ে দেওয়াল দখলের লড়াই। দেওয়াল চুনকাম করে রং, তুলিতে বিভিন্ন দলের প্রতীক আর প্রার্থীর নাম ফুটিয়ে তোলার কাজে তৎপর হয়ে উঠতেন শিল্পীরা। বরাত আসত অহরহ। কিন্তু এখন দিন বদলেছে। দেওয়াল লিখনে (Graffiti) ভোটের প্রচার কমছে। তার জায়গায় ব্যানার, ফ্লেক্স, ফেস্টুন, হোর্ডিং তৈরি হচ্ছে বেশি। তাছাড়া এখন সোশ্যাল মিডিয়াতেও (Social Media) প্রচারে সরব সব দল। ফলে দেওয়াল লিখন শিল্পীদের কাজ কমছে। নতুন প্রজন্মও এগিয়ে আসছে না। ভোটের মরশুমেও তাই আক্ষেপ শিল্পীদের।
ভোটের প্রচারে ফ্লেক্স, ফেস্টুনের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে দেওয়াল লিখন। পঞ্চায়েত ভোটেও (Panchayat Vote) সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রচারেই বেশি ব্যবহার হচ্ছে ফ্লেক্স, ফেস্টুন। আর দেওয়াল লেখার যেটুকু চাহিদা রয়েছে, সেটাও সামাল দিতে পারছেন না শিল্পীরা। নাওয়াখাওয়া ছেড়ে এখন কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে তাঁদের। একে দেওয়াল লেখার শিল্পীর অভাব, তার উপর দোরগোড়ায় পঞ্চায়েত ভোট। কাজের চাপে ঘুম উড়েছে দেওয়াল লেখার শিল্পীদের।
লোকসভা বা বিধানসভা ভোটে একজন করে প্রার্থীর নাম লিখতে হয়। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থীর সংখ্যা অনেক। গ্রাম পঞ্চায়েত (GP), পঞ্চায়েত সমিতি (PS), জেলা পরিষদ (ZP) মিলিয়ে অনেক প্রার্থী। তাই সময়মতো কাজ সেরে উঠতে পারছেন না শিল্পীরা। দিনের পাশাপাশি রাতেও চলছে কাজ। হুগলি জেলায় তৃণমূলের দেওয়াল লেখা বেশি চোখে পড়ছে, সেদিক থেকে অনেকটা পিছিয়ে বিরোধী দলগুলো। বেশিরভাগ দেওয়াল শাসকদলের দখলে। তবে সমস্যা দেখা দিয়েছে অন্য জায়গায় দেওয়ালে দলের কর্মীরা চুনকাম করে দিলেও শিল্পীর অভাবে লেখার কাজ শেষ হয়নি অনেক জায়গায়। এই বিষয়ে বর্ষীয়ান শিল্পীদের মত, দেওয়াল লেখার কাজ আর কেউ শিখতে চাইছে না। সবার নজর ফ্লেক্স আর ফেস্টুনের দিকে। তবুও যেটুকু চাহিদা রয়েছে নতুন প্রজন্ম কেউ কাজ শিখতে চাইছে না বলে কাজ করার শিল্পীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
দেওয়াল লিখন শিল্পী তারক ভাণ্ডারি বলেন, “এখন তাঁদের নাওয়াখাওয়ায় সময় নেই, দিন-রাত এক করে দেওয়াল লেখার কাজ করে যেতে হচ্ছে। কিন্তু আস্তে আস্তে এই শিল্পটা হারিয়ে যাচ্ছে, ভোটের সময় কাজ আর সারাবছর কাজ না থাকায় নতুনরা সেভাবে এগিয়ে আসছে না এই কাজের জন্য। তাদের যারা দীর্ঘদিন ধরে এই কাজ করেন তাদেরকেই এই কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে।” যদিও শাসকদল তৃণমূলের (TMC) থেকেই ডাক বেশি আর তৃণমূলের দেওয়াল লেখার কাজের চাপটাই বেশি। সেদিক থেকে বিরোধীদের থেকে তেমন ডাক নেই। আর আগে যেমন ছোটখাটো প্রচারের ক্ষেত্রেও দেওয়াল লিখতে হতো সেটা এখন ফ্লেক্স, ফেস্টুন আর হোর্ডিংয়ের মধ্যে দিয়ে অনেকে করে নিচ্ছে তাই তাদের দেওয়াল লেখার শিল্পীদের কাজ কমছে।
অপর এক শিল্পী সৌম্যদীপ দাস বলেন, এখন ভোটের সময় তাই কাজ পাচ্ছেন, কিন্তু এরপর আর সেরকম কাজ থাকে না। তাই আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে এই দেওয়াল লিখন। তৃণমূলের প্রার্থী রীতা রায়ের বক্তব্য, এখন দেওয়াল লেখার লোক পাওয়া যায় না। তাই তাদের দলের কর্মী-সমর্থকদের নিয়েই অনেক জায়গায় হাত লাগাতে হয় দেওয়াল লেখার কাজে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.