সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: কুড়মি সমর্থিত নির্দলের সঙ্গে কি বিজেপির জোট? পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর দু’নম্বর ব্লকের বড়রা গ্রাম পঞ্চায়েতের গুরুডি সংসদে একটি দেওয়াল লিখন ঘিরে জেলার রাজনৈতিক মহলে এই প্রশ্ন উঠেছে।
কিছুদিন আগেই ঝাড়গ্রামের লালগড় থানা এলাকায় বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ কুড়মি সংগঠনের হাতে ঘেরাও হয়েছিলেন। সেই সময় তিনি বিক্ষোভকারীদেরকে নিজেই বলেছিলেন, তাদের খেমাশুলির অবরোধ আন্দোলনে তিনি চাল পাঠিয়ে সাহায্য করেছিলেন। বিজেপির সর্বভারতীয় নেতা তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষের এহেন বক্তব্যে শোরগোল বেঁধেছিল। কারণ শাসক দল বেশ কিছুদিন ধরেই অভিযোগ করছে কুড়মিদেরকে ভুল বোঝাচ্ছে বিজেপি। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে সাহায্য করছে গেরুয়া শিবির। তাহলে কি এই জেলার একাধিক জায়গায় বিজেপির সঙ্গে কুড়মি সংগঠনগুলোর জোট হয়েছে?
ওই দেওয়াল লিখন কিন্তু জেলার রাজনৈতিক মহলে জল্পনা বাড়িয়ে দিয়েছে। সেই দেওয়াল লিখনের ছবি এখন সামাজিক মাধ্যম-সহ হোয়াটসঅ্যাপে ঘুরছে। কী রয়েছে ওই দেওয়াল চিত্রতে? এক পাশে বড় করে পদ্মফুলের চিহ্ন। তার তলায় লেখা ‘জয় শ্রীরাম’। আর পদ্ম ফুলের ঠিক নিচে কুড়মি সমর্থিত নির্দল প্রার্থীর প্রতীক লাল রঙে লাঙলের ছবি। পাশে লেখা গ্রাম সভায় ‘হাল'(লাঙল) চিহ্নে ভোট দিন। এখানে গ্রাম সভায় প্রার্থীর নাম দেওয়া রয়েছে রানু মাহাতো। তারপর পঞ্চায়েত সমিতিতে প্রার্থীর নাম লেখা রয়েছে দীনবন্ধু চক্রবর্তীকে পদ্মফুল চিহ্নে ভোট দিন। জেলা পরিষদে লেখা নবকুমার বাউরিকে পদ্মফুল চিহ্নে ভোট (Panchayat Election) দিন। ওই দেওয়াল লিখনের তলায় লেখা রয়েছে “পদ্ম ফুলে দিলে ছাপ। মুছে যাবে বাংলার পাপ।”
তবে জেলার রাজনৈতিক মহল সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু রঘুনাথপুর দু’নম্বর ব্লকের বড়রা গ্রাম পঞ্চায়েতের গুরুডি সংসদে নয় বিজেপির সঙ্গে জেলার একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে কুড়মি সমর্থিত নির্দলের জোট হয়েছে। এমনকি বিজেপির জোট হয়েছে সিপিএমের সঙ্গেও। কাশীপুর ব্লকের বড়রা গ্রাম পঞ্চায়েতের মুরলু পাঁচ নম্বর আসনে কুড়মি সমর্থিত নির্দল প্রার্থীর স্বামী বিজেপির পদাধিকারি। তাই স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব বলছে, ওই প্রার্থী তো তাদেরই।
তবে রঘুনাথপুর দু’নম্বর ব্লকের ওই দেওয়াল চিত্র সামনে আসতেই ওই ব্লকের তৃণমূল সভাপতি সঞ্জয় মাহাথা বলেন, “গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই এলাকায় বিজেপি একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করে কোন কাজ করেনি। ফলে এখন তার জবাব দিতে পারছে না। তাই অন্যদের সঙ্গে জোট বেঁধে ভোট বৈতরণী পার হতে চাইছে।” তবে বিজেপির জেলা সভাপতি বিবেক রাঙ্গা বলেন, “আমরা অনেক জায়গায় প্রার্থী দিইনি। সেখানে স্থানীয় স্তরে গ্রামবাসীরা মিলে একটা জোট হয়েছে। সেই জোটকে আমরা সমর্থন করছি। সেই জোটের কিছু জায়গায় পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদে আমাদের প্রার্থীকে সমর্থন করছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের নিরিখে এটা খুব স্বাভাবিক ঘটনা।”
তবে আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা (প্রধান নেতা) অজিতপ্রসাদ মাহাতো বলেন, “আমরা একেবারে প্রথম থেকে বলে আসছি আমাদের সামাজিক সংগঠনের তরফে কোন প্রার্থী দেওয়া হবে না। তবে আমরা নির্দলকে সমর্থন করব। এই নীতি নিয়েই আমাদের কাজ চলছে।” তবে এই দেওয়াল লিখন ঘিরে এমন বিতর্ক তৈরি হয়েছে যে তা মুছে ফেলা হয়। কিন্তু শাসক দল ওই এলাকায় কুড়মি সমর্থিত নির্দল ও বিজেপি আঁতাত নিয়ে প্রচার তুঙ্গে তুলেছে। একদিকে যেমন বিজেপিকে বিঁধছে। তেমনই কুড়মি সংগঠনকে। কারণ তারা কোন রাজনৈতিক দলকেই সমর্থন করবেন না বলে জানিয়েছিলেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.