চঞ্চল প্রধান: শেখ সুফিয়ানের প্রার্থী হওয়া নিয়ে দিনভর তপ্ত নন্দীগ্রাম। তৃণমূলেরই একাংশ নন্দীগ্রাম ১ নম্বর ব্লকে পার্টি অফিসে তালা দিয়ে সারাদিন বিক্ষোভ দেখাল। শেষ পর্যন্ত রাতে নন্দীগ্রামে ছুটে গিয়ে পার্টি অফিস খোলালেন দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। গভীর রাতে কুণালের হস্তক্ষেপে বিক্ষোভও ওঠে। ঠিক হয়েছে নন্দীগ্রাম ১ নম্বর ব্লক থেকে জেলা পরিষদে শেখ সামশুলই প্রার্থী হবেন।
নন্দীগ্রামের জেলা পরিষদ আসনে শেখ সুফিয়ান প্রার্থী ঘোষণা হওয়াতে বুধবার সকাল থেকেই বিক্ষোভ শুরু হয়। একাধিক অঞ্চলের তৃণমূল নেতারা নন্দীগ্রাম ১ নম্বর পার্টি অফিসের সামনে জড়ো হন। বিক্ষোভকারীরা শেখ সামশুলকে প্রার্থী করতে হবে বলে দাবি জানাতে থাকে। বিক্ষোভে অংশ নেন সামশুল নিজেও। ছিলেন সদ্য বিজেপি থেকে আসা জয়দেব দাস, শেখ সাউদি, জেলার চেয়ারম্যান পীযুষ ভুঁইয়ার মতো নেতারাও। বিক্ষোভকারীদের মূল অভিযোগ ছিল, ২০২১-এ নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোটে শেখ সুফিয়ানের ভূমিকা সঠিক ছিল না। শেখ সুফিয়ান অবশ্য বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।
বিক্ষোভকারীরা পার্টি অফিসে তালা লাগিয়ে দেয়। সুফিয়ান বিরোধী স্লোগান ওঠে। নন্দীগ্রামে যখন এই বিক্ষোভ চলছিল তখন কাঁথিতে জেলা সভাপতি তরুণ মাইতির সঙ্গে বৈঠকে ছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। প্রার্থী সংক্রান্ত শেষমুহূর্তের কিছু জট খোলার জন্যই বৈঠক চলছিল। বিক্ষোভ থেকে কুণালের কাছে ফোন যায়। কুণাল বিক্ষোভকারীদের সাফ জানিয়ে দেন, আগে পার্টি অফিস খুলতে হবে, তারপর আলোচনা শুরু হতে পারে। কুণালের শর্ত শেষপর্যন্ত বিক্ষোভকারীরা মেনে নেয়। কিন্তু ততক্ষণে রাত হয়ে যাওয়ায় জেলার তৃণমূল নেতারা অনেকেই কুণালকে এই পরিস্থিতিতে নন্দীগ্রাম না যেতে অনুরোধ করেন। জেলার নেতাদের অনুরোধ না মেনে কুণাল ঠিক করেন রাতেই নন্দীগ্রাম যাবেন। কুণাল নন্দীগ্রামে পৌঁছনোর পরও বিক্ষোভকারীদের স্লোগান চলতে থাকে। ‘সুপিয়ানকে চাই না’, ‘সামশুলকে প্রার্থী করতে হবে’, এইসব স্লোগান ওঠে বিক্ষোভ থেকে। ঘটনাস্থলে পুলিশও আসে।
কুণাল নন্দীগ্রাম পার্টি অফিসের সামনে পৌঁছে বিক্ষোভকারীদের জানিয়ে দেন, আগে অফিসের তালা খুলতে হবে। তারপর অফিসের ভিতরেই আলোচনা হবে। বিক্ষোভে থাকা নেতারা অনেকে বলতে থাকেন, পার্টি অফিস খুললেই হামলা হতে পারে। কিন্তু কুণাল অনড় ছিলেন। সাধারণ জনতার সঙ্গেও কুণাল বলতে শুরু করেন। শেষপর্যন্ত পার্টি অফিসের তালা খোলা হয়। এরপর পার্টি অফিসেই স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কুণাল দীর্ঘ বৈঠক করেন।
বৈঠক শেষে সংবাদ মাধ্যমকে কুণাল বলেন, ‘‘ওঁরা আমাকে ওঁদের বক্তব্য জানিয়েছেন। তৃণমূল একটা বড় পরিবার। একই পদে অনেকই দাঁড়াতে চান। আমি ওঁদেরকে বলেছি, আপনাদের বক্তব্য শীর্ষ নেতৃত্বকে জানাব। কিন্তু, পার্টি অফিস খোলা রাখতে হবে।’’ তখন ওখানেই স্লোগান ওঠে ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিন্দাবাদ’, ‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জিন্দাবাদ’, কুণালের নামেও জয়ধ্বনি দেওয়া হয়। রাতেই কুণাল তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেন। ঠিক হয়েছে, নন্দীগ্রামের জেলা পরিষদ আসনে শেখ সামশুলকেই প্রার্থী করা হবে। আজ, বৃহস্পতিবার দুপুরে নন্দীগ্রামে গিয়ে সেকথা কুণাল ঘোষণা করে দেবেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.