সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: তৃণমূলের ভরা বাজারেও জঙ্গলমহল পুরুলিয়ার বেশ কিছু আসনে প্রার্থী দিতে পারল না শাসকদল। ফলে নির্দল প্রার্থীদের ঘাসফুলের প্রতীক দিয়ে মান বাঁচানোর চেষ্টা করছে পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। এমনকী, কয়েকটি আসনে যে শাসকদলের প্রার্থী নেই, তা জানেন না দলের স্বয়ং জেলা সভাপতি তথা পুরুলিয়া জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ স্থায়ী সমিতির বিদায়ী কর্মাধ্যক্ষ সৌমেন বেলথরিয়াই। তবে তিনি বলেন, “নির্দলরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন প্রতীক পাওয়ার জন্য। “
নির্বাচন কমিশন (Election Commission) সূত্রে জানা গিয়েছে, বান্দোয়ান ব্লকের বান্দোয়ান গ্রাম পঞ্চায়েতের গঙ্গামান্না দু’নম্বর সংসদে শাসকদল প্রার্থী দিতে পারেনি। ওই সংসদে দুই নির্দল প্রার্থীর নাম শিবানী রাজওয়াড় ও রেখা কালিন্দী। একইভাবে ওই ব্লকের একদা মাওবাদী উপদ্রুত কুঁচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ৬ নম্বর সংসদ আসনপানিতে সিপিএম (CPM), বিজেপি (BJP), নির্দল এমনকি ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা প্রার্থী দিলেও তৃণমূল প্রার্থী দিতে পারেনি। জয়পুর ব্লকের জয়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের গড় জয়পুর ১৪ নম্বর আসনেও প্রার্থী দিতে পারেনি শাসকদল।
অথচ আসনপানি ও গড়জয়পুর এই দুটি আসনে তৃণমূলের প্রার্থী দিতে না পারার বিষয়টি জানতেনই না জেলা সভাপতি। তাঁর কথায়, “গড়জয়পুরে তৃণমূলের প্রার্থী রয়েছে।” কিন্তু কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানে কংগ্রেসের মিলনী মণ্ডল ও বিজেপির সঞ্জতি কৈবর্ত প্রার্থী রয়েছেন। ওই আসনে তৃণমূলের (TMC) কোনও প্রার্থী নেই। গ্রাম পঞ্চায়েতের (Panchayat Election 2023) এই তিনটি আসন ছাড়াও পুরুলিয়া দু’নম্বর ব্লকের আগয়া নড়রা গ্রাম পঞ্চায়েতের ডুমুরডি তিন নম্বর আসনে শাসকদল প্রার্থী দিতে ব্যর্থ হয়েছে। যে তিনজন নির্দল প্রার্থী রয়েছেন তারা হলেন রঘুনাথ মাহাতো, বিশ্বজিৎ মাহাতো ও বিপ্লবকুমার মাহাতো। এই এলাকা আদিবাসী কুড়মি সমাজের ঘাঁটি বলে পরিচিত। কয়েক দিন আগে এই এলাকায় পুরুলিয়া দু’নম্বর ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব দলীয় পতাকা পর্যন্ত টাঙাতে পারেননি। যা দলের রাজ্য নেতৃত্ব একেবারেই ভালো চোখে দেখেনি।
২০১৮ সালের মতো জঙ্গলমহলের জেলায় বিজেপির অবস্থা নেই। গত বিধানসভা নির্বাচনের (Assembly Election) সময় থেকেই জেলায় ক্রমশ ভাঙছে গেরুয়া শিবির। তা সত্ত্বেও এই জেলায় শাসকদল বেশ কিছু আসনে প্রার্থী না দেওয়ায় মুখ পুড়লো তাদের। তাই মান বাঁচাতে নির্দল প্রার্থীরা এখন ভরসা। কিন্তু গড়জয়পুর আসনে নির্দল প্রার্থী নেই। সেখানে কংগ্রেস ও বিজেপি। কিন্তু এই পরিস্থিতি হল কেন? জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের উদাসীনতা যে অন্যতম প্রধান কারণ তা বলছেন দলের নেতা-কর্মীরাই। অভিযোগ দল গোষ্ঠীকলহে এমন জর্জরিত যে সংগঠনের হাল কোথায় বেহাল সেদিকেও নজর দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।
পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণার পর থেকেই এই জেলায় প্রার্থী নিয়ে পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল নেতৃত্বকে ব্যাপক বেগ পেতে হয়েছিল। বিশেষ করে জেলা পরিষদের প্রার্থী তালিকা নিয়ে ব্যাপক সমস্যার মধ্যে পড়ে তৃণমূল নেতৃত্ব। গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির মতো জেলা পরিষদেও এক আসনে তৃণমূলের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে গোষ্ঠীকলহে জর্জরিত পুরুলিয়া (Purulia) জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। মনোনয়ন পর্বে তার ব্যাপক প্রভাব পড়ে। মনোনয়নের শেষের দিনে একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েতের একাধিক আসনে প্রার্থী দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় তৃণমূল নেতৃত্বকে বলে অভিযোগ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.