শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: প্লেটোর ‘প্রস্তাবিত’ আদর্শ রাষ্ট্রে কবিদের কোনও জায়গা ছিল না। তাঁদের নির্বাসন দিতে চেয়েছিলেন। বলা বাহুল্য, বিশিষ্ট ওই গ্রিক দার্শনিকের প্রস্তাব শেষ পর্যন্ত প্রস্তাব হয়েই রয়ে গিয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাস হেঁটেছে উলটোপথে। রাষ্ট্রচিন্তায় ক্রমাগত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে কবিরই বাণী। নির্বাসন নয়, বারবার রাষ্ট্র ও রাজনীতির আঙিনায় তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা নিতে দেখা গিয়েছে একের পর এক কবিকে। বাংলার বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও সেই ট্র্যাডিশন চলছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের (West Midnapore) দাসপুর ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির ৪২ নম্বর আসনে এবার সিপিএমের (CPM) প্রার্থী কবি রামচন্দ্র মাইতি। কবির জনপ্রিয়তাকে সামনে রেখেই ফের তাঁকে পঞ্চায়েতের (Panchayat Election) রণাঙ্গনে নামিয়েছে লাল পার্টি।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়ে বামপন্থী লেখক-শিল্পী মহলে কবি রামচন্দ্র মাইতি বেশ পরিচিতি নাম। বর্তমানে গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সংঘের রাজ্য কমিটির সদস্য তিনি। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ লেখার পাশাপাশি ২০১২ সাল থেকে ‘এই সময়’ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনাও করেন রামবাবু। দাসপুর (Daspur) ২ নম্বর ব্লকের খুকুড়দহ গ্রাম পঞ্চায়েতের জগন্নাথপুর গ্রামের বাসিন্দার জনপ্রিয়তার কথা মাথায় রেখেই ফের তাঁকে প্রার্থী করা হল। তবে এবারই প্রথম নয়, এর আগেও তিনি নির্বাচনী রাজনীতিতে একাধিকবার পা রেখেছেন।
বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর রামবাবু বরাবরই বামপন্থী ঘরানার। ঘাটাল কলেজে ছাত্র রাজনীতিতে হাতেখড়ি তাঁর। ১৯৯৮ সালে দাসপুর দুই নম্বর ব্লকে পঞ্চায়েত সমিতির (Panchayat Samiti) আসনে দাঁড়িয়ে হেরে যান বিশিষ্ট কবি। তবে ২০০৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে দাঁড়িয়ে জিতে যান এবং পঞ্চায়েত প্রধান হন। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত সমিতির আসনে দাঁড়িয়ে ফের পরাজিত হন তিনি। তৃণমূলের (TMC) দাপটের মাঝেও ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে পঞ্চায়েত সমিতির আসনে দাঁড়িয়ে জিতে যান রামবাবু। সারা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় যেখানে একের পর এক আসনে পরাজয় সিপিএমের দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানে রাম মাইতি ফের ২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে এই ৪২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির আসনে জয়লাভ করেন এবং পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা হন। বিরোধীশূন্য পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় একমাত্র তিনিই একটি ব্লকের বিরোধী দলনেতা।
এহেন রাজনৈতিক কেরিয়ার সম্পন্ন বিশিষ্ট কবিকে এবারও পঞ্চায়েত ভোটের প্রার্থী করেছে সিপিএম। বিগত বোর্ডের বিরোধী দলনেতা হিসাবে রামবাবু তৃণমূলের জবকার্ড দুর্নীতি থেকে শুরু করে আবাস যোজনায় দুর্নীতি, আমফান দুর্নীতি থেকে একশো দিনের কাজের দুর্নীতির কথা তুলে ধরেছিলেন, যা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন ব্লক প্রশাসন। রামবাবু বলেন, ‘‘গত পাঁচ বছরে শাসকদল কাজ করেনি বললে সত্যের অপলাপ হবে। বিরোধী দলনেতা হিসাবে দেখেছি তৃণমূলের অনেকেই সৎভাবে কাজ করতে চান। কিন্তু তাঁকে কাজ করতে দেওয়া হয়নি। অনেক পঞ্চায়েত প্রধান জানেনই না আমফান ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা চলে গিয়েছে জেলায়। আবাস যোজনার তালিকায় কাদের নাম রয়েছে বা কীসের ভিত্তিতে তালিকা তৈরি হল, তাও জানেন না পঞ্চায়েত প্রধান বা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য। এটা তো ঠিক না। ফলে আজ যে তৃণমূলের অন্দরে দুর্নীতির ছড়াছড়ি, এর জন্য দায়ী শাসকদলেরই একটি অংশ। তাঁরাই চালাচ্ছেন দল। একদিন না একদিন মানুষ এর জবাব দেবেন। ’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.