সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পর্ব থেকেই হটস্পট হয়ে উঠেছিল একাধিক জেলা। উত্তররের কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুরে ঝরেছে রক্ত। দক্ষিণের ভাঙড়, ক্যানিংয়েও ছবিটা বদলায়নি। রাজনৈতিক সংঘর্ষে বারবার শিরোনামে উঠে এসেছে মুর্শিদাবাদ। অশান্তি ছড়িয়েছে দেগঙ্গা, আমতা, নন্দীগ্রামের মতো এলাকাকাতেও। কেমন ভোট হল রাজ্যের অশান্তির হটস্পটগুলিতে? ঘুরে দেখল সংবাদ প্রতিদিনের প্রতিনিধিরা।
মুর্শিদাবাদ: পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণার পর থেকেই শিরোনামে নবাবের এই জেলা। কখনও বিস্ফোরণ তো কখনও রাজনৈতিক হানাহানিতে প্রাণ গিয়েছে বহু মানুষের। ভোটেরও দিনও ছবিটা বিশেষ বদলাল না। শুক্রবার গভীর রাত থেকে শনিবার রাত পর্যন্ত জেলায় ভোটের বলি ৫। তৃণমূল ৩, সিপিএম ১ ও কংগ্রেস ১। জায়গায়-জায়গায় ভোট লুট, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, শাসক-বিরোধী সংঘর্ষ, বোমাবাজিতে উত্তপ্ত রইল গোটা জেলা। যার প্রভাব পড়ল ভোটবাক্সতেও। বিকেল ৫টা অবধি জেলায় ভোটের হার মোটে ৪৩ শতাংশ।
কোচবিহার: দিনহাটা, গীতালদহ, শীতলকুচি- এলাকার নামগুলি বারবার উঠে এসেছে খবরের শিরোনামে। নেপথ্য রাজনৈতিক হিংসা, সন্ত্রাস। আপাতত দৃষ্টিতে জেলায় শান্তিপূর্ণ ভোট হলেও রক্ত ঝরেছে জায়গায়-জায়গায়। মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের। গুলিবিদ্ধ অন্তত ৮। অন্তত ২৫-৩০টি বুথে ভোট লুটের অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। বিতেল ৫টা অবধি জেলায় ভোটের হার ৫১.৯২ শতাংশ।
উত্তর দিনাজপুর: ভোটের বাজারে মানুষের প্রাণ ‘গণ্ডা’য় গুনল উত্তর দিনাজপুরের দুই প্রান্তের চারটি গ্রাম। কড়ায় গণ্ডায় একে অপরকে বুঝে নেওয়ার লড়াইয়ে চরটি পরিবারে কেউ হারাল বাবা, কেউ হারাল দাদা, কোনও মায়ের আবার কোল খালি হয়ে গেল। মৃত্যু হল ৫ জনের-কংগ্রেস ২, বিজেপি ২ এবং তৃণমূল প্রার্থী। গুলিবিদ্ধ আরও ১ জন। একাধিক কেন্দ্রের ভোট লুটের অভিযোগ উঠেছে। সন্ধে ৬টা পর্যন্ত ভোটের হার ৫৮.৬৯ শতাংশ।
মালদহ: ভোটের আগের অশান্তির আঁচ বহাল রইল ভোটের দিনও। প্রাণ গেল দুজনের। জখম অন্তত ২৫। বোমাবাজি, গুলিবৃষ্টি থেকে ভোট লুটের অভিযোগ উঠেছে এই জেলায়। ভোট বাক্সে বিকেল ৫টা অবধি ভোট পড়েছে অন্তত ৬৩ শতাংশ।
ভাঙড়: মনোনয়ন পর্বে তিনজন খুন হলেও শূন্যে গুলি, বোমা বিস্ফোরণে দুই শিশু জখম ও অবরোধের মতো দু-তিনটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া ভাঙড়ের পঞ্চায়েত ভোট হল নির্বিঘ্নেই। শেষবেলায় অবশ্য কাশীপুরে জমি রক্ষা কমিটির প্রার্থীর এজেন্টকে মারধরের অভিযোগে অবরোধ ও বিক্ষোভে উত্তেজনা ছড়ায় পোলেরহাট-২ পঞ্চায়েতে। পুলিশ ও র্যাফের সঙ্গে অবরোধকারী মহিলাদের দীর্ঘক্ষণ ধরে বচসা ও বাকযুদ্ধে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। মূলত ভাইজানহীন ভাঙড়ে নিস্পৃহই রইল আইএসএফ। দক্ষিণ ২৪ পরগনার আরও দুই হটস্পট ছিল ক্যানিং ও বাসন্তী। তবে এই এলাকার অধিকাংশ আসনেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছে শাসকদল। ফলে অধিকাংশ আসনে ভোটই হয়নি। তবে কুললিতে প্রাণ গেল ১ জনের।
নন্দীগ্রাম: হাই ভোল্টেজ ম্যাচ। আর রাজ্যের নজরও ছিল সেদিকে। সেই নন্দীগ্রামে বিক্ষিপ্ত অশান্তি হল। বেশ কিছু বুথে ঝামেলা হল, যে অশান্তির সূত্রপাত হয়েছিল শুক্রবার রাতে গ্রামে ঢুকে পড়া বিজেপির বহিরাগতদের তাড়া খাওয়া, স্থানীয়দের প্রতিরোধ ও ওই দুষ্কৃতীদের বাইক ফেলে পালানোকে ঘিরে। শনিবারও বেশ কিছু বুথে বিক্ষিপ্ত ঝামেলার সাক্ষী রইল নন্দীগ্রাম। ভোট লুট, কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিতে বিক্ষোভ, ব্যালট বাক্স ভাঙার মতো একাধিক অভিযোগ, পালটা অভিযোগ উঠল। তবে সবমিলিয়ে এই এলাকায় ভোট ছিল শান্তিপূর্ণ।
বীরভূম: অনুব্রতহীন বীরভূমের দিকে নজর ছিল সকলের। বগটুই-সহ গোটা বীরভূমেই ভোট মিটল শান্তিতে। প্রাথমিক তথ্যে জেলা প্রশাসনের আশা ৭০ শতাংশের উপর ভোট পড়েছে।কিন্তু জেলা জুড়ে বেশ কয়েকটি বুথে অশান্তির জেরে কটি বুথে পুর্ননির্বাচন হবে সে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। জেলায় বেশ কয়েকটি জায়গায় মুখ বেঁধে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বুথে ঢুকে ছাপ্পা মারার অভিযোগ। তার জেরেই ব্যালট বাক্স কোথাও পাশের পুকুরে গিয়ে পড়েছে। মজুদ ব্যালটে আগুন ধরিয়ে প্রতিবাদ করেছে গ্রামবাসীরা। ময়ূরেশ্বর, খয়রাশোল, দুবরাজপুর ও সিউড়ির কয়েকটি বুথে এই বিক্ষিপ্ত ঘটনাগুলি ঘটে।
ভাতার: প্রতি ভোটেই অশান্তির জন্য় শিরোনামে থাকে পূর্ব বর্ধমানের ভাতার এলাকা।এবারও পূর্ব বর্ধমানে প্রাণ গেল দুজনের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.