সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ছেলের মৃত্যু হয়েছিল কুকুরের কামড়ে৷ কিন্তু ঝাড়খণ্ড লাগোয়া পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের গ্রামের দরিদ্র পরিবারটির স্থির বিশ্বাস ছিল, ভূত কিংবা ডাইন তাঁদের ছেলেকে গ্রাস করেছে৷ তাই সেই অশুভ শক্তির খোঁজে ঝাড়খণ্ড থেকে ‘জানগুরু’র ডাক পড়ে৷ তিনি গ্রামে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ যজ্ঞ-ঝাড়ফুঁকের পরও কোনও ভূত বা ডাইনের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়নি৷ এরপরই বেঁধে যায় গন্ডগোল৷ তিন ওঝাকে আটকে রেখে চলে বিক্ষোভ৷ শেষমেশ কোনওক্রমে পালিয়ে প্রাণে বাঁচেন তাঁরা৷
ঘটনার সূত্রপাত মাস ছয় আগে৷ বান্দোয়ানের শিরকা গ্রামে ছ’বছরের বালককে কামড়েছিল একটি সারমেয়৷ সেসময় ঠিকমতো চিকিৎসা না হওয়ায় ক্রমশ অসুস্থ হয়ে পড়তে থাকে সে৷ তারপর হাসপাতালে ভরতি করে চিকিৎসা করা হলেও, লাভ হয়নি৷ মাস দুই আগে সে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ে৷ কিন্তু অভিভাবকরা ভেবেছিলেন, ভূত বা ডাইনের কবলে পড়ে ছেলের মৃত্যু হয়৷ আর সেই ঘাতক ডাইন বা ভূতকে খুঁজতে তাঁরা ঝাড়খণ্ডের বেড়াদায় ওঝার সঙ্গে যোগাযোগ করেন৷ মোটা অঙ্কের বিনিময়ে শিরকা গ্রামে গিয়ে ঝাড়ফুঁক করতে রাজি হয় ৩ ‘জানগুরু’৷ মঙ্গলবার ভূত খুঁজতে যজ্ঞ–ঝাড়ফুঁকের আয়োজন শুরু হয়।
মঙ্গলবার বিকাল চারটে নাগাদ শুরু হয় যজ্ঞ৷ প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা ধরে যজ্ঞের পর সন্ধে সাড়ে সাতটা নাগাদ তাঁরা জানান, ভূত–ডাইন কিছুই খুঁজে পাচ্ছেন না। তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন গ্রামবাসীরা৷ তাঁরা দাবি করতে থাকেন, ডাইন বা ভূত খুঁজে দিতেই হবে। ব্যস, শুরু হয়ে যায় গন্ডগোল। ওই তিন ‘জানগুরু’কে আটকে রেখে চলে তুমুল বিক্ষোভ। তারপর তারা ক্ষমা চেয়ে কোনওভাবে সেখান থেকে পালিয়ে বাঁচেন।
এরপর বুধবার ওই গ্রামে যায় পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের একটি প্রতিনিধি দল। সংগঠনের পুরুলিয়া জেলা কমিটির প্রতিনিধিরা সেখানে গিয়ে গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের বোঝান, ভূত বা ডাইন বলে কিছু নেই। সবটাই কুসংস্কার। সংগঠনের পুরুলিয়া জেলা কমিটির সম্পাদক তথা চিকিৎসক নয়ন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই গ্রামের মানুষজনকে আমরা বুঝিয়েছি, এইভাবে কুসংস্কারকে প্রশয় দেবেন না। ডাইন বা ভূত বলে কিছু নেই। পুলিশকে বলেছি, ওই ‘জানগুরু’দের খুঁজে ব্যবস্থা নিন।’’
ঝাড়খণ্ড লাগোয়া পুরুলিয়ার এই গ্রাম এখনও কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। ডাইন–ভূতের নামে এখনও ঝাড়ফুঁক চলে। আর এসব কুসংস্কারকে সামনে রেখে ওঝাদের রমরমা কারবার। তবে এদিন বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যরা গ্রামে গিয়ে বোঝানোর পর হয়ত কুসংস্কারের অন্ধকার কিছুটা হলেও কাটবে বলেই আশা সকলের৷
ছবি: অমিত সিং দেও৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.