করিমুল হক
ব্রতীন দাস ও অরূপ বসাক: ডুয়ার্সের চা শ্রমিক থেকে আজ তিনি দেশের ‘পদ্মশ্রী’। তাঁকে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নিজে। কিন্তু তাতে বিন্দুমাত্র বদলায়নি করিমুল হকের যাপনচিত্র। পরনে লুঙ্গি আর গেঞ্জি৷ উঠোনে গর্ত খুড়ে ইট দিয়ে বানানো উনুন৷ উবু হয়ে বসে শুকনো পাতা জ্বালানি দিয়ে এখনও ভাত রাঁধেন তিনি৷ প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছাবার্তা নিয়ে করিমুলের বাড়িতে এসেছিলেন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া। করিমুল তাঁকে জোড়হাতে জানিয়ে দিয়েছেন, পদ্মশ্রী সম্মান পেয়ে তিনি খুশি। কিন্তু তার চেয়ে অনেক বেশি খুশি হবেন যদি তাঁর গ্রামে চেল নদীর উপর একটা সেতু হয়৷ একটা হাসপাতাল হয়৷ এটা হলে বহু মানুষের দুর্ভোগ ঘুচবে৷
সবাই তাঁকে চেনেন ‘বাইক দাদা করিমুল’ হিসাবে৷ ভাঙাচোরা একটা বাইককে সম্বল করে তিনি গত পনেরো বছর ধরে রাত-দিন আর্তের সেবা করে চলেছেন৷ বিনিময়ে কারও কাছ থেকে একটি পয়সাও নেননি৷ বরং দিনের পর দিন স্ত্রী-ছেলে বউমাদের নিয়ে আধপেটা খেয়ে সংসারের খরচ বাঁচিয়ে বাইকের তেল কিনেছেন৷ সমাজে আলোর দিশা দেখালেও এই পদ্মশ্রীর বাড়িতে বাতি নেই৷ দাদার ঘরে বিদ্যুৎ রয়েছে৷ সেখান থেকে আলো এসে পড়ে তাঁর কুঁড়েঘরে৷ হাতজোর করে বলেন, “আমি অতি সাধারণ মানুষ৷ জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এভাবেই থাকতে চাই৷” করিমুলের রোজগার বলতে গ্রামের সুবর্ণপুর চা বাগানে কুলি সর্দারের কাজ করে মাসে পাঁচ হাজার টাকা বেতন। এক বছর আগেও করিমুলের বেতন ছিল চার হাজার টাকা৷ সমাজসেবায় তাঁর ব্রত দেখে বাগান মালিক সুকুমার দাস এক হাজার টাকা বেতন বাড়িয়ে দেন৷
এবার মহার্ঘ হচ্ছে টয়ট্রেনের জয়রাইড
কীভাবে শুরু হয়েছিল আর্তের সেবা করার কাজ? প্রশ্ন শুনেই করিমুলের চোখের কোলে চলকে ওঠে জল৷ বলেন, “১৯৮৫ সাল৷ ঝড়-জলের রাত৷ হঠাৎ মার বুকে ব্যথা শুরু হয়৷ গ্রামে কোনও গাড়ি খুঁজে না পেয়ে মাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারিনি৷ চোখের সামনে যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে মা মারা যায়৷ তার পরই শপথ নিই, গ্রামের আর কোনও মাকে এভাবে চলে যেতে দেব না৷” সেই থেকে চা বলয়ে নতুন ভোর আনতে লড়ে চলেছেন তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.