ছবি: প্রতীকী
অপরাজিতা সেন: ওভারড্রাফট কাণ্ডের জেরে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নিয়ে বিড়ম্বনা আরও বাড়ল রাজ্য বিজেপির। রাষ্ট্রায়ত্ত পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকের (পিএনবি) ওই শাখা থেকে ইতিমধ্যেই টাকা তোলায় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। ৫০ কোটি টাকারও বেশি ওভারড্রাফট নেওয়ার সুবিধাযুক্ত ওই ‘কারেন্ট অ্যাকাউন্ট’ থেকে নেওয়া ঋণের বিশদ তথ্য তলব করে এবার ব্যাংকের তরফে রীতিমতো কড়া নোটিস পাঠানো হল। রিজার্ভ ব্যাংকের নির্দেশিকা উদ্ধৃত করে পাঠানো ওই নোটিসে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত যাবতীয় শর্ত সবিস্তারে উল্লেখ করা হয়েছে। একইসঙ্গে লেনদেনের ক্ষেত্রে ওইসব নির্দেশিকা না মানা হলে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হবে বলেও স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
রাজ্য বিজেপির পাশাপাশি দলের বিভিন্ন শাখার অ্যাকাউন্টও রয়েছে পিএনবিতে। স্বাভাবিকভাবেই ওই অ্যাকাউন্টে লেনদেনের ক্ষেত্রে কী এমন গলদ ধরা পড়েছে যার জেরে ওই নোটিস, তা নিয়ে জল্পনা চরমে। অন্যদিকে, একটি রাজনৈতিক দলের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৫০ কোটি টাকারও বেশি ওভারড্রাফট নেওয়ার সুবিধা থাকার বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অ্যাকাউন্টটি বিজেপির রাজ্য শাখার হওয়ার জন্যই বিধি ভেঙে এই বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে কি না, সেই বিতর্কও দানা বাঁধছে।
রাজ্য শাখার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জটিলতার খবর ইতিমধ্যেই দিল্লিতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে পৌঁছেছে। সেই তথ্য নিয়ে ছানবিনের মাঝেই ব্যাংকের কড়া নোটিস দলীয় দপ্তরে পৌঁছনোয় বিজেপির রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্তরে আপাতত তোলপাড় তুঙ্গে। রাজ্য বিজেপির ওই অ্যাকাউন্ট নিয়ে চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকের পাঠানো নোটিসের অনুলিপি (সত্যতা যাচাই করা যায়নি) ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর দপ্তরে এসে পৌঁছেছে।
দু’পাতার সেই চিঠি তথা নোটিসে বিভিন্ন অঙ্কের ওভারড্রাফট নেওয়ার সুবিধা-সহ কারেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে রিজার্ভ ব্যাংকের নিয়ম বিশদে উল্লেখ করা হয়েছে। আর সেই সুবাদেই বিজেপির ওই কারেন্ট অ্যাকাউন্টের (নং-০০৮৫০০২১০০০২২৮৯৩) প্রসঙ্গ তুলে বলা হয়েছে, অ্যাকাউন্টটি থেকে ৫০ কোটি টাকারও বেশি ওভারড্রাফট নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। চিঠি পাওয়ার পাঁচদিনের মধ্যে ওই অ্যকাউন্ট থেকে ঋণ নেওয়া সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য বিশদে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানাতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে ব্যাংকের রীতিমতো স্পষ্ট হুঁশিয়ারি, লেনদেনের ক্ষেত্রে রিজার্ভ ব্যাংকের নির্দেশিকা লঙ্ঘন ধরা পড়লে প্রয়োজনে ওই অ্যাকাউন্ট বন্ধও করে দেওয়া হতে পারে।
দু’পাতার চিঠিটিকে ব্যাংক কর্তৃপক্ষই কার্যত নোটিস বলে ধরে নেওয়ার নিদান দিয়েছে। কাজেই যে অ্যাকাউন্টে বিপুল অঙ্কের লেনদেনের আভাস স্পষ্ট, সেই অ্যাকাউন্ট নিয়েই ব্যাংকের এমন কড়া নোটিস ঘিরে জল্পনা চরমে। ওভারড্রাফট সংক্রান্ত বিধিভঙ্গের জেরেই যাবতীয় জটিলতা না কি আরও গুরুতর কোনও গরমিল ধরা পড়েছে গোটা প্রক্রিয়ায়, তা নিয়েও গুঞ্জন দানা বাঁধছে। বিজেপির রাজ্যস্তরের সিনিয়র নেতারা এই বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ। বিষয়টি দিল্লিতে বি এল সন্তোষ-সহ নেতৃত্বকে রাজ্য নেতৃত্বের তরফে আগেই জানানো হয়েছে। দিল্লি থেকে ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে।
ব্যাংক সূত্রে প্রাথমিক খবর, একটি বড় পরিমাণ ওভারড্রাফট হয়ে আছে। সেটিই পূরণ করতে বলা হয়েছে। তবে বিষয়টি আরও গুরুতর কিছু কি না, তা-ও এখনই নির্দিষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না বলেই সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর। এদিকে, ব্যাংকে বিপুল ওভারড্রাফট প্রসঙ্গে দলীয় খরচের বিষয়টি নিয়ে বিজেপির শীর্ষ মহলে তুমুল চর্চা শুরু হয়েছে। কোন জেলা, কোন শাখায় কত খরচ, সেখানে কোন কর্মসূচি হয়েছে, সাংগঠনিক অবস্থা কেমন, সবকিছুরই খোঁজ নিচ্ছে দিল্লি। যাবতীয় তথ্য যাচাই করা চলছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.