ধীমান রায়, কাটোয়া: দেবী এখানে সালঙ্কারা। মাকে সাজানো হয় স্বর্ণালঙ্কারে। এক, আধ ভরি নয়, প্রায় সাড়ে চার কেজি সোনার গহনায় সাজিয়ে তবেই পূজা করা হয় কাটোয়ার খ্যাপাকালীকে। স্থানীয়দের কাছে তিনি খেপি মা নামেও পরিচিত। ৫০০ গ্রাম ওজনের সোনার কানপাশা মাতৃমূর্তির অন্যতম আকর্ষণ।
[ছাগ রক্তেই ‘তুষ্ট’ হন সোনামুখির শতাব্দীপ্রাচীন পায়রা কালী]
কাটোয়ার মালোপাড়া এলাকায় এক সময় ছিল গভীর জঙ্গল। জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় ছিল জনবসতি। স্থানীয় এক ব্যক্তিই প্রথম এই পুজোর সূচনা করেছিলেন। তিনি ছিলেন সাধক প্রকৃতির এবং খানিকটা খ্যাপাটে স্বভাবের। জনশ্রুতি অনুযায়ী ওই ব্যক্তি ঝোপঝাড়ের ভিতরই নিজের হাতে একটি কালীমূর্তি তৈরি করে পুজার্চনা শুরু করেন। মালো অর্থাৎ জেলে সম্প্রদায়ের ওই ব্যক্তির হাতে প্রতিষ্ঠিত কালীই খ্যাপাকালী নামে পরিচিতি পায়। কেউ কেউ খেপিমাও বলেন। মালো সম্প্রদায়ের লোকজনই এই পুজো চালিয়ে আসতেন। বর্তমানে ট্রাস্টি কমিটি পুজো চালায়। কমিটির সম্পাদক শ্যামল ঘোষ জানান, খ্যাপাকালীর মাহাত্ম্যের কথা দূর-দূরান্তে প্রচারিত। বহু ভক্ত পুজো দিতে আসেন। তাঁরা অনেকে মানত করেন। মানত পূর্ণ হলে সোনার গহনা উৎসর্গ করে যান। সেই সব গহনায় দেবীকে সাজানো হয়। দেবীকে জাগ্রত হিসাবে মানেন এলাকার বাসিন্দারা। কাটোয়ার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে মালোপাড়ায় রয়েছে এই খ্যাপাকালী মন্দির। বারোমাস হয় নিত্যসেবা।
[দেবী পালাতে পারেন, এই আশঙ্কায় ভক্তদের ‘নজরবন্দি’তে মা কালী]
শ্যামলবাবুর সংযোজন, গত বছর দেবীর অঙ্গভূষণের জন্য ৫০০ গ্রাম ওজনের সোনার কানপাশা তৈরি করা হয়। এক প্রখ্যাত জুয়েলারি সংস্থা ১৪ লক্ষ টাকা খরচ করে ওই স্বর্ণালঙ্কার বানায়। পুজোর সময় সমস্ত গহনা পরিয়ে দেবীকে সাজানো হয়। খ্যাপাকালী পুজোয় প্রচুর জন সমাগম হয়। পুলিশি ঘেরাটোপে দেবীকে রাখা হয়। এজন্য বাড়তি পুলিশি ব্যবস্থা থাকে। কার্তিকী অমাবস্যার পুজোয় লাখো মানুষের সমাগম হয়। দেখতে দেখতে খেপি মায়ের পুজোর বয়স হয়ে গেল প্রায় সাড়ে চারশো বছর।
ছবি: জয়ন্ত দাস
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.