ছবি: জয়ন্ত দাস।
ধীমান রায়, কাটোয়া: দেবীপ্রতিমার অঙ্গসজ্জায় পরানো হয়েছিল লক্ষ লক্ষ টাকার গয়না। কিন্তু রাতে পুজো কমিটির পক্ষ থেকে পাহারাদার না থাকায় সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করল দুষ্কৃতীরা। পূর্ব বর্ধমান (East Burdwan)জেলার ভাতার থানার ওড়গ্রামে কালীপুজোর বিসর্জনের আগেই পরপর তিনটি মন্দির থেকে চুরি হয়ে গেল কয়েকলক্ষ টাকার দেবীর অলংকার। মঙ্গলবার সকালে স্থানীয়রা দেখতে পান, দেবী প্রতিমার গয়না (Ornaments) উধাও। ঘটনা ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় ভাতার থানার পুলিশ। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। তবে এখনও চুরির কিনারা হয়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাতারের জঙ্গলমহল ওড়গ্রামে কালীপুজোয় (Kali Puja) বরাবরই প্রচুর ধুমধাম হয়। ওড়গ্রাম নতুনপাড়ায় রয়েছে ‘বড়মা’ কালীমন্দির। বড়মা কালী কয়েক শতাব্দীর দেবী। সোমবার রাতে এই মন্দিরে চুরির ঘটনা ঘটে। দেবীপ্রতিমার অঙ্গ থেকে যাবতীয় সোনা ও রূপোর অলংকার চুরি করে নিয়ে গিয়েছে দুস্কৃতীরা। বড়মা মন্দির থেকে কিছুটা দূরেই রায়পাড়ার ক্ষ্যাপামা কালী মন্দির। বাদ যায়নি এই মন্দিরও। গেটের তালা ভেঙে এই মন্দিরে চুরির ঘটনা ঘটে। পাশাপাশি চুরি হয়েছে বড়মা মন্দিরের কাছাকাছি ছোটমা কালী মন্দিরেও। তবে ছোটমা কালী প্রতিমার গায়ে ততটা বেশি কিছু অলংকার ছিল না। কিন্তু বড়মা ও ক্ষ্যাপা কালী এই দুই মন্দির মিলেই কয়েক লক্ষ টাকার গয়না চুরি গিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
ওড়গ্রামের নতুন পাড়ায় বড়মা পুজো পারিবারিক হলেও তা কার্যত সর্বজনীন পুজো হয়ে উঠেছে। এক বছর পাল পরিবার এবং পরবর্তী দু বছর গ্রাম ষোল আনা পুজো পরিচালনা করেন। এবছর পুজোর পালা ছিল পাল পরিবারের। রীতি অনুযায়ী, পুজো শুরুর আগে দেবীকে গয়না পরানো হয়। বিসর্জনের আগে আবার সেসব গয়না খুলে নেওয়া হয়। তার পর বিসর্জন হয়। বড়মা কালীতলায় সোমবার সন্ধ্যা থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছিল বলে জানা যায়। রাত প্রায় ১২টা পর্যন্ত মন্দির সংলগ্ন এলাকায় লোকজনও ছিল। যদিও পুজো কমিটির তরফে রাতে পাহারার জন্য মন্দিরে কোনও ব্যবস্থা রাখা ছিল না।
মঙ্গলবার সকালে স্থানীয়রা লক্ষ করেন, প্রতিমার গায়ের সমস্ত গয়না চুরি হয়ে গিয়েছে। স্থানীয়রা জানান, বড়মার অঙ্গ থেকে প্রায় পাঁচ ভরি সোনার গয়না এবং ১০০ ভরির রূপোর গয়না চুরি গিয়েছে। এদিকে, ওড়গ্রামে রায়পাড়ায় ক্ষ্যাপামা মন্দিরেও একই রাতে চুরির ঘটনা ঘটে। মন্দিরের তিনটি গেটে তালা দেওয়া ছিল। তার মধ্যে একটি গেটের তালা ভেঙে লুটপাট করে পালায় দুষ্কৃতীরা। বড়মা ও ক্ষ্যাপা মা এই দুটো কালী প্রতিমার উচ্চতা ১৫ ফুটের কাছাকাছি। স্থানীয়দের অনুমান গয়না খোলার সময় দুষ্কৃতীদের মই ব্যবহার করতে হয়েছে।
ক্ষ্যাপামা কালীর সেবাইত শান্তি আঁকুড়ে জানান, রাতে মন্দিরেই তিনি শুয়েছিলেন। সকালে তাঁর নজরে আসে, প্রতিমার অঙ্গ থেকে রূপোর মুকুট, সোনার হার, সোনার জিভ সমস্ত অলঙ্কার খোয়া গিয়েছে। তাঁর ধারণা, চুরির আগে তাঁকে গ্যাস জাতীয় কিছু স্প্রে করে বেহুঁশ করে দেওয়া হয়েছিল। তাই তিনি কিছু টের পাননি। স্থানীয়দের দাবি, ক্ষ্যাপা মায়ের মন্দির থেকে প্রায় ১৫ ভরি সোনার অলংকার ও ১০০ ভরি রূপোর সাজ চুরি গেছে। ছোটমার মন্দিরও অল্প কিছু গয়না চুরি গিয়েছে। তিনটি মন্দিরে দুঃসাহসিক চুরির ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। যদিও এত দামি দামি অলংকারে প্রতিমাকে সাজানো হলেও পুজোর কয়েকটা দিন কেন স্থানীয়রা রাত পাহারার ব্যবস্থা রাখেননি, সেই প্রশ্নও তুলেছেন এলাকার একাংশ। পর পর মন্দিরে চুরির ঘটনায় উৎসবের আবহে ভাঁটা পড়ল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.