মনিরুল ইসলাম, উলুবেড়িয়া: রাত পোহালেই সেই অভিশপ্ত দিন। পুলওয়ামা জঙ্গি হামলার বর্ষপূর্তি। গত বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি জঙ্গি হামলায় ৪৯ জন সিআরপিএফ জওয়ানের মৃত্যু হয়েছিল। সেই ঘটনায় শহিদ হয়েছিলেন উলুবেড়িয়ার বাউড়িয়ার বাসিন্দা বাবলু সাঁতরা।
বাবলুর স্মরণে ইতিমধ্যে এলাকায় তার মূর্তি বসানো হয়েছে এক মন্দির কমিটি ও বাবলুর পরিবারের উদ্যোগে। তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে উলুবেড়িয়া পুরসভার সহায়তায় ও ১১ নম্বর ওয়ার্ডের পরিচালনায় এক ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। এক সংস্থার উদ্যোগে মেচেদা থেকে বাবলুর বাড়ি পর্যন্ত বাইক মিছিলের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া নানা সময়ই বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কিন্তু পরিবারে এক শূন্যতা সমসময় রয়ে গিয়েছে। বাবলুর স্মৃতি চিহ্ন তাঁদের কাছে আজও অমলিন। বাবলুর মা বনমালা দেবী বললেন, প্রতিবার বাড়িতে এসে কোনও না কোনও কাজ করতেন বাবলু সাঁতরা। নিজে হাতে তৈরি করেছিলেন বাড়ির উঠোনের ঢালাই। বাড়ির ছোট খাটো সব কাজেই রয়েছে বাবলুর হাতের ছোঁয়া। যেদিকে তাকান সেদিকেই যেন বাবলুকে আজও দেখতে পাওয়া। বাড়িতে এসে কাটারি, শাবল, কোদাল নিয়ে খুঁটিনাটি কাজ করতেন বাবলু। ও চলে গেলে সেসব গুছিয়ে রাখা হত। প্রয়োজনে সেগুলোতে হাত দিলেও বাবলুর কথা মনে পড়ে যায়।
১৪ ফেব্রুয়ারি বাবলুর মৃত্যু হলেও তিথি অনুযায়ী তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী গত ৩ ফেব্রুয়ারি হয়েছে। সেই উপলক্ষে ওইদিনই বাড়ির লোকেরা তার বাৎসরিক পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন বলে জানান বনমালা দেবী। তবে তিনি সবসময় শান্তি চান বলেই দাবি করলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সাধারণ মানুষ। আমরা চাই সবসময় শান্তি বজায় থাকুক। আমি চাই না আর কোনও মায়ের কোল এভাবে খালি হোক।’ তবে এক বছর কাটতে চললেও তদন্তের গতি প্রকৃতি নিয়ে তিনি বিশেষ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি সরকারের উপর আস্থা রেখেছেন। তিনি বলেন, ‘সরকার যেটা ঠিক মনে করছে সেটা করছে। আমার কিছু বলার নেই।’ ততক্ষণে তাঁর চোখ ছলছল হয়ে উঠল। আঁচলের খোঁট দিয়ে চোখ মুছতে লাগলেন বনমালা দেবী। তবে বাবলুর ভাই কল্যাণ সাঁতরা বলেন, ‘জানি না সরকার কী তদন্ত করছে।’ তাঁর প্রশ্ন, শহিদদের ঘাতকরা শাস্তি পাবে তো ?
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ জম্মু থেকে কাশ্মীর যাওয়ার পথে পুলওয়ামার অবন্তিপুরাতে জঙ্গি হামলায় ৪৯ জন জওয়ান শহিদ হন। বাবলু তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি সিআরপিএফের ৩৫ নম্বর ব্যাটালিয়নের জওয়ান ছিলেন। ২০০০ সালে বাবলু সিআরপিএফে যোগ দেন। তখন তিনি উলুবেড়িয়া কলেজে পাঠরত ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পরপরই অনেক নেতা-মন্ত্রীরা এসেছিলেন বাবলুদের বাড়িতে। রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার তার পাশে থেকেছেন বলেও বনমালা দেবী বলেন। বৃহস্পতিবার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল বাবলুর মা একাই বাড়িতে ছিলেন। বাবলুর স্ত্রী মিতা সাঁতরা মায়ের বাড়ি হুগলির উত্তরপাড়ায় থাকেন। মাঝেমধ্যেই শ্বশুরবাড়িতে আসেন। গত ৩ তারিখে বাবলুর বাৎসরিক পারলৌকিক ক্রিয়ায় এসেছিলেন। তিনি কাঁকুড়গাছিতে কাজ করেন। মেয়েকেও উত্তরপাড়ার এক স্কুলে ভরতি করেছেন। পরিবারের লোকেরা জানান, ১৪ ফেব্রুয়ারি অনেকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মিতাকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। কিন্তু তিনি যাবেন না বলে বাড়িতে জানিয়েছেন। তিনি কাল বাড়িতেই থাকবেন বলেছেন।
এদিকে, মিতা সাঁতরা জানান, ‘রাজ্য সরকার ও সিআরপিএফ আমাদের পাশে রয়েছে। আগামিদিনেও তারা পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে। বাবলু না থাকায় পরিবারে বিরাট শূন্যতা তৈরি হয়েছে। তা সত্ত্বেও জীবন ভালমন্দ নিয়ে চলছে।’ পুলওয়ামার ঘটনার তদন্ত নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি। সিআরপিএফ জওয়ানদের নিরাপত্তা নিয়ে তিনি বলেন, ‘তখন বলেছিলাম আকাশপথে জওয়ানদের নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে। কিন্তু সেক্ষেত্রে সরকারের আর্থিক প্রশ্ন ও জড়িত থাকে। শুধু বললেই হবে না। অনেক কিছু নিয়ে তখন আমার জানা ছিল না।’ নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে কিনা তেমন তিনি কোনও খবর পাননি বলে জানান। চাকরি সংক্রান্ত ব্যক্তিগত বিষয়ে তিনি কিছু বলবেন না বলে জানান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.