ধীমান রায়, কাটোয়া: এবঙ্গে কালী মন্দিরের অভাব নেই। তবে একটি মন্দিরে দুটি কালী প্রতিমা! এমন ছবি সচরাচর দেখা যায় না। একই চালার নীচে জোড়া কালীর আরাধনা হয় কাটোয়ার রোন্ডা গ্রামের শর্মা-মণ্ডল পরিবারে। যে পুজোর বয়স হয়ে গেল প্রায় ৩৫০ বছর। শুরুতে অবশ্য একটিই প্রতিমা পুজো হত। তবে দু’পুরুষ পর জোড়া প্রতিমার পুজোর রেওয়াজ চালু হয়। এর পিছনে রয়েছে অন্য এক কাহিনি।
[এককালের ত্রাস, এখনও ভক্তিভরে মা কালীর পুজো করেন এই প্রাক্তন ডাকাত সর্দার]
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রোন্ডা গ্রামের শর্মা মণ্ডল পরিবারের আগে পদবি ছিল ঘোষাল। পরে তারা শর্মা মণ্ডল উপাধি পান। বংশের পূর্বপুরুষ পার্বতীচরণ ছিলেন বাংলার নবাব সিরাজদৌলার উচ্চপদস্থ কর্মচারী। নবাব তাঁকে এলাকার জমিদার হিসাবে নিযুক্ত করেন। তখন সিরাজদৌলাই শর্মা মণ্ডল উপাধি দান করেছিলেন। পরিবারের বর্তমান সদস্য নারায়ণ শর্মা মণ্ডল, বংশী শর্মা মণ্ডলদের কথায়, স্বপ্নাদেশ পেয়ে ৩৫০ বছর আগে অধুনা কাটোয়ার রোন্ডা গ্রামে কালীপুজো শুরু হয়েছিল। তখন একটি মূর্তি পুজো হত। তারপর পরিবার ভাগ হওয়ার পর পারিবারিক অশান্তির জেরে একবছর পৃথকভাবে এক সদস্য কালীপুজো শুরু করেন। সেবছর পরিবারে ভয়ঙ্কর বিপদ হয়েছিল। দেবী স্বপ্নাদেশে নাকি জানিয়েছিলেন একই বেদিতে জোড়া প্রতিমার পুজো করতে হবে। তখন থেকেই একই মন্দিরে জোড়া প্রতিমার পুজো হয়ে আসছে।
[জানেন, রাবণের মৃত্যুর পর মন্দোদরীর কী হয়েছিল?]
আগে শর্মা মণ্ডল পরিবারে বলি প্রথা ছিল। সেসব এখন আর নেই। বর্তমানে বৈষ্ণব মতে পুজো হয়। নারায়ণ বাবু জানান, প্রায় ৩০০ বছর আগে কালীপুজোয় রাতে বলিদান হয়েছিল। সেই মাংস পরের দিন রান্না করে সকলে যখন ভোজ খাচ্ছিলেন তখন মাংসে কটু গন্ধ পাওয়া যায়। পুরোহিত তখন পরামর্শ দিয়েছিলেন, মায়ের পুজোয় প্রাণীহত্যা বন্ধ করতে। সেই থেকে বলিদান প্রথা বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে শর্মা মণ্ডল পরিবারে ৯৭ জন সদস্য রয়েছেন। ধুমধাম করেই পুজো হয়। আশপাশের গ্রামের মানুষ এই পারিবারিক পুজোয় অংশ নেন। সকলেই জাগ্রতা দেবী হিসাবে মানেন। একই মন্দিরে দু-দুটি কালিকার আরাধনার খবর বহু দূরের গাঁয়ের লোকেরাও অমাবস্যায় পৌঁছে যান কাটোয়ার রোন্ডা গ্রামে।
ছবি: জয়ন্ত দাস
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.