সৈকত মাইতি, তমলুক: মাত্র ১ টাকার বিনিময়ে চিকিৎসা। তাতেই হয়েছে অগণিত মানুষের দুরারোগ্য ব্যধির নিরাময়। ‘গরিবের ভগবান’, মানবদরদী চিকিৎসক তুষার রায়ের প্রয়াণে তাই শোকের ছায়া প্রায় সারা তমলুক শহর জুড়ে। শেষ শ্রদ্ধাটুকু জানাতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়লেন অগণিত ভক্ত, শুভানুধ্যায়ীরা।
বছর দুয়েক আগেই তুষারবাবুর স্ত্রী মার যান। একমাত্র ছেলেও কর্মসূত্রে দীর্ঘদিন পরিবার নিয়ে মুম্বইয়ে। তবে শিকড়ের টান আর অসংখ্য মানুষের ভালবাসায় তমলুকেই থেকে যান তুষারবাবু। অবসর জীবনে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা ও সমাজসেবা করেই দিন কাটাতেন। মঙ্গলবার দুপুর থেকে তিনি কিছুটা অসুস্থ বোধ করেন। নিজের সমস্যার কথা বুঝে নিজেই তৎক্ষণাৎ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা শুরু করেন। অনেকটা সুস্থও হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু আজ, বুধবার সকালে ফের অসুস্থ বোধ করায় তাঁকে তমলুকের একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই প্রায় ঘণ্টা দুয়েক চিকিৎসা চলে তাঁর। বেলা ১২টা নাগাদ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ১ টাকার চিকিৎসক। বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। চোখের জলে তাঁকে বিদায় জানান স্থানীয়রা।
ঐতিহাসিক তাম্রলিপ্ত শহরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের টাউন শংকরআরা এলাকার বাসিন্দা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক তুষার রায়। যিনি ছিলেন পাঁশকুড়া বনমালী কলেজের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক। কিন্তু হোমিওপ্যাথিতে তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্যের দরুণ অল্প সময়েই ডাক্তার হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। প্রায় ৪ দশক ধরে অধ্যাপনার পাশাপাশি বাড়িতে বসেই অগণিত মানুষের চিকিৎসা করেছেন তিনি। প্রথমদিকে মাত্র ১ টাকার বিনিময়ে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা শুরু করেন। সেই টাকায় ওষুধ কেনার খরচ বাঁচিয়ে যেটুকু থাকত, তা দিয়েই তিনি সমাজের দুস্থদের মধ্যে একরকম নীরবেই নানা সাহায্য করতেন। গরিব, মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত- বহু মানুষের দুরারোগ্য ব্যধি সারিয়ে তুলেছেন তিনি। পাশাপাশি তমলুক শহরেই একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গড়ে তুলেছিলেন। যেখানে দুস্থ ও মেধাবী পড়ুয়াদের নিখরচায় কোচিং করানো হত।
শিক্ষক বাসুদেব দাস বলেন, “জীবনভর কর্মযোগের মাধ্যমে উনি যে উচ্চতায় নিজেকে নিয়ে গিয়েছেন, তা আমাদের কাছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তবুও নানা অসুখে দ্রুত আরোগ্য পেতে প্রতিনিয়তই অগণিত মানুষ ভিড় করতেন ওঁর দুয়ারে।” আর এক চিকিৎসক বিশ্বনাথ মিশ্র জানান, এমন মানুষ আজকের সমাজে বিরল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.