Advertisement
Advertisement

Breaking News

শিশুমৃত্যু

দেবীপক্ষের সূচনায় দুধের শিশুকে আছড়ে মারল ‘অসুর’ বাবা

কালো হওয়ার জেরে মেয়েকে খুন করার অভিযোগ মণিরুল খাঁর বিরুদ্ধে।

one person allegedly murdered his child for her dark complexion

ছবিটি প্রতীকী

Published by: Soumya Mukherjee
  • Posted:September 28, 2019 9:46 pm
  • Updated:September 28, 2019 9:51 pm  

নবেন্দু ঘোষ, বসিরহাট: পিতৃপক্ষের অবসানে সূচনা হয়েছে দেবীপক্ষের। কাকভোরে মহালয়ার পুণ্যতিথিতে সবাই যখন দেবী দুর্গার আবাহনে মত্ত। ঠিক তখনই বসিরহাটের খাঁ পাড়ায় জেগে উঠেছিল এক ‘অসুর’। সবাই যখন নারীশক্তির বন্দনা করে মাতৃ আরাধনায় ব্যস্ত। তখন মেয়ে হওয়ার অপরাধে দুধের শিশুকে আছড়ে খুন করার অভিযোগ উঠল তার বাবার বিরুদ্ধে। শনিবার দুপুরে পাশবিক এই ঘটনাটি ঘটেছে স্বরূপনগর থানার খাঁপাড়ায়। মৃতের নাম ঝিকড়া খাতুন। সাড়ে তিন মাস বয়সী ওই শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বসিরহাট জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মূল অভিযুক্ত মনিরুল খাঁ, তার বাবা এবাদুল খাঁ-সহ পরিবারের বাকি সদস্যরা পালিয়েছে। তাদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।

[আরও পড়ুন: যুদ্ধজয়ের পর প্রতিষ্ঠিত, দেবীপক্ষে বাস্তবের ‘উমা’দের সম্মান পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের]

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন বছর আগে স্বরূপনগরের তরণিপুর গ্রামের মেয়ে সোনিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় খাঁপাড়ার বাসিন্দা মনিরুলের। বাড়ির চাপে বিএ পড়তে পড়তে মাধ্যমিক পাশ ছেলের সঙ্গে বিয়ে হয় সোনিয়ার। সেসময় চাহিদা মতো অলঙ্কার এবং নগদ অর্থ-সহ অন্যান্য জিনিসপত্র দেওয়া সত্ত্বেও সোনিয়াকে মারধর করত স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি-সহ অন্যরা। এনিয়ে সংসারে অশান্তি লেগে ছিল। তার উপর সাড়ে তিনমাস আগে সোনিয়া একটি মেয়ের জন্ম দেওয়ায় অশান্তি আরও বাড়ে।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে খবর, শনিবার সকাল থেকে একরত্তি মেয়েকে নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বচসা শুরু হয়। দুপুর দেড়টা নাগাদ তা বড় আকার নেয়। মণিরুল ও তার মা বলতে থাকে, একে মেয়ে সন্তান। তার উপর ঝিকড়ার গায়ের রঙ কালো। তাই এই বাড়িতে তার জায়গা হবে না। এই নিয়ে বচসা চলার মাঝেই মনিরুল ছোট্ট শিশুকে ধরে মাটিতে আছাড় মারে বলে অভিযোগ। যদিও সেকথা গোপন রেখে স্থানীয় হাসপাতালে গিয়ে মনিরুল বলে, কোল থেকে পড়ে গিয়ে মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। যদিও ততক্ষণে গ্রামবাসীদের মুখ থেকে আসল সত্য জানাতে পেরেছে সবাই। তাই পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগে গ্রামবাসীদের আলোচনা শুনে এলাকা ছেড়ে পালায় মণিরুল-সহ বাকি অভিযুক্তরা।

[আরও পড়ুন: পুজোর বোনাসেই ক্যানসারের চিকিৎসা, আক্রান্ত ছাত্রীর পাশে একদল যুবক-যুবতী]

পরে ঘটনাস্থলে গেলে দেখা যায় মেয়ের শোকে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন সোনিয়া। তাঁর কথায়, ‘সেলাইয়ের কাজ করে স্বামী। ওই কাজ শেষে শুক্রবার আমার জন্য রাতের খাবার নিয়ে বাড়ি ফিরেছিল। তা নিয়ে শাশুড়ি অশান্তি শুরু করলে আমি প্রতিবাদ করি। তখন মনিরুল আমাকে মারধর করে। কন্যা সন্তান জন্মানোর জন্য আমাকে দোষারোপ করে। আজ সকালে শ্বশুর ও শাশুড়ির ইন্ধনে ফের অশান্তি শুরু হয়। দুপুরে তা চরম পর্যায়ে পৌঁছয়। ওই সময়ে আমাকে মারতে মারতে হঠাৎ মেয়েকে তুলে আছাড় মারে মণিরুল।’

প্রতিবেশীদের কথায়, মেয়ে হওয়ায় অখুশি ছিল খাঁ পরিবার। বিষয়টি নিয়ে প্রায় ওই পরিবারে গন্ডগোল হত। তাই বলে একটা শিশুকে প্রকাশ্যে তার বাবা আছাড় মেরে খুন করতে পারে সেকথা স্বপ্নেও ভাবা যায় না। অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

সোনিয়ার বাবা ইসমাইল ঘরামি বলেন, ‘ছেলে ভাল মনে করে কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে পড়া ছাড়িয়ে মনিরুলের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলাম। জামাইয়ের সব চাহিদা পূরণ করি। তা সত্ত্বেও ওরা সকলে মিলে মেয়েকে শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যাচার করত। আর আজ কন্যা সন্তান হওয়ার জন্য বাচ্চাটাকেই আছড়ে খুন করল।’

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement