শুভ্রদীপ রায় নন্দী, শিলিগুড়ি: বাগডোগরার দম্পতি খুনের ঘটনায় নয়া মোড়। ক্যাটারিং সংস্থার কর্মী ভূমিকা সেওয়া ও তার প্রেমিক সঞ্জয় তামাংকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। গোপনসূত্রে খবর পেয়ে সোমবার কালিম্পংয়ের রিয়াং য়ে সঞ্জয়ের খোঁজে যায় পুলিশ। তবে খবর পয়ে আগেই সেখান থেকে পালিয়েছে সঞ্জয়। ভূমিকার ফোনের টাওয়ার লোকেশন দেখেই শেষপর্যন্ত হায়দার পাড়ার বাড়ি থেকে সঞ্জয়কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশে। ধৃত সঞ্জয় পেশায় হাইড্রোর গাড়ির চালক। শনিবার মধ্যারাতে খুশওয়া দম্পতিকে খুনের পর সে রিয়াংয়ে জামাইবাবুর কাছে চলে যায়। প্রায় দু’দিন সেখানেই ছিল সে। পুলিশ সেখান থেকেই সঞ্জয়কে গ্রেপ্তার করেছে।
জানা গিয়েছে, অভিযুক্তের প্রেমিকা ভূমিকা সেওয়াকে দফায় দফায় জেরা করতেই ঝুলি থেকে বিড়াল বেরিয়ে পড়ে। ভূমিকা জানায়, রাগের বশে খুশওয়া দম্পতিকে খুন করেছে সঞ্জয়। খুনের পর ঠান্ডা মাথায় দম্পতির বাড়ি থেকে নগদ টাকা ও গয়না মিলিয়ে সাত লক্ষ টাকা নিয়ে চম্পট দেয় সে। ভেবেছিল কয়েকদিন গা-ঢাকা দিয়ে থাকবে, পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে প্রেমিকাকে নিয়ে পালিয়ে যাবে। তবে তার আগেই ধরা পড়ে গেল অভিযুক্ত।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত সঞ্জয় শিলিগুড়ির হায়দার পাড়ার ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে ভাড়া নিয়ে থাকত। অন্যদিকে প্রেমিকা ভূমিকা থাকত খুশওয়া দম্পতির বাড়িতেই। ক্যাটারিং সংস্থার মালিক অজয় খুশওয়ার কাছেই কর্মরত ছিল ভূমিকা। দিন তিনেক ধরে অসুস্থ থাকার কারণে খুশওয়াদের বাড়িতেই থাকতে শুরু করে ওই তরুণী। খুশওয়া দম্পতি তাঁদের বাড়ির তিনতলায় ভূমিকাকে থাকতে দিয়েছিলেন। মনে করা হচ্ছে, খুশওয়া দম্পতির টাকা পয়সা হাতানোর জন্য ছক কষেছিল এই প্রেমিক-প্রেমিকা। দোতলায় থাকতেন ওই দম্পতি। বাড়িতে থাকার জন্য কখন কীভাবে টাকা আসছে সবদিকেই খেয়াল রাখত ভূমিকা। সব কথাই পৌঁছে যেত প্রেমিক সঞ্জয়ের কাছে। সেইমতো আগে থেকেই দম্পতিকে খুনের পরিকল্পনা তারা করে রেখেছিল। শনিবার রাতে ভূমিকাকে ডাকেন মিনা খুশওয়া। ম্যাসাজ করে দেওয়ার জন্য ভূমিকাকে অনুরোধও করেন তিনি। ঘরের মধ্যে ম্যাসাজের সুয়োগ পেয়ে রাজি হয়ে যায় ভূমিকা। কিছুক্ষণ পর অজয় খুশওয়াও তাকে ম্যাসাজ করতে বলেন। প্রথমটায় রাজি না হলেও মিনাদেবীর অনুরোধে অজয়বাবুকে ম্যাসাজ করে দিচ্ছিল ভূমিকা। সেই সময় প্রেমিকাকে দেখতে ও বাড়িতে আসে সঞ্জয়। খোলা দরজা দিয়ে ম্যাসাজের দৃশ্য দেখে ফেলেই তার রাগ চরমে ওঠে। অভিযোগ, ঘরে ঢুকেই ভারী জিনিসের আঘাতে দম্পতিকে থেঁতলে মারে সে। পরে টাকা পয়সা নিয়ে চম্পট দেয়।
এদিকে খুনের তদন্তে নেমে প্রথমেই ভূমিকার বক্তব্যে সন্দেহ জাগে পুলিশের। ভূমিকা বারবার বলছিল, দোতলায় দম্পতি খুন হলেও তিনতলা থেকে সে কোনওরকম সাড়াশব্দ পায়নি। রাতে খুন হল, সকাল পর্যন্ত বিষয়টি কেউ জানতেই পারল না। একই বাড়িতে থেকে কিছুই শুনল না ভূমিকা। পুলিশ বিশ্বাস করেনি। তাকে থানায় নিয়ে গিয়ে দফায় দফায় জেরা করতেই প্রকৃত সত্য বেরিয়ে পড়ে। এরপরেই রিয়াং থেকে সঞ্জয়কে গ্রেপ্তার করা হয়। যদিও গ্রেপ্তারির পর থেকেই মুখে কুলুপ এঁটেছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.