ছবি: জয়ন্ত দাস।
ধীমান রায়, কাটোয়া: আবাস যোজনা প্রকল্পে পাঁচ পরিবারের উপভোক্তা একজনই! সুদেষ্ণা রায় নামে জনৈক সুবিধাভোগী একাই পেয়ে গিয়েছেন পাঁচ পাঁচটি আবাস যোজনার অনুদান! কিন্তু কে এই সুদেষ্ণা রায়? প্রশাসনিক প্রতিনিধিরা সার্ভে করতে গিয়ে এলাকা চষে বেড়ালেও তাঁরা হদিশ পাননি। আর এই ‘অজানা’ সুদেষ্ণাই এখন আবাস যোজনার অনুদান পাওয়ার ক্ষেত্রে ‘যোগ্য’দের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া ২ ব্লকের জগদানন্দপুর পঞ্চায়েত এলাকার পাঁচ পরিবার এখন হতাশ। নাম বিভ্রাটের কারণে তাঁদের আবাস যোজনার অনুদান পাওয়ার আশা নেই বলে জানিয়েছেন কাটোয়া ২ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ গৌতম ঘোষাল। তাঁর দাবি, “তালিকা তৈরির সময় সুবিধাভোগীর নাম এন্ট্রি করার সময় কোনও সরকারি কর্মচারী এই ভুল করেছেন। তাঁর গাফিলতির কারণেই এলাকার পাঁচটি হতদরিদ্র পরিবার আবাস যোজনার অনুদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
সম্প্রতি রাজ্য সরকার আবাস যোজনার সুবিধাভোগীদের তালিকার উপর সার্ভে করার নির্দেশ দিয়েছে। সেই অনুযায়ী রাজ্য জুড়ে এলাকায় এলাকায় সমীক্ষা চলছে। কাটোয়া ২ ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে জগদানন্দপুর পঞ্চায়েত এলাকায় অনুদান প্রাপকদের নামের তালিকা ধরে সার্ভে করতে গিয়ে কার্যত চক্ষু চড়কগাছ প্রশাসনিক প্রতিনিধিদের। তাঁরা দেখতে পান, এই পঞ্চায়েতের পৃথক পৃথক ৬ টি আইডি নম্বরে একজনেরই নাম রয়েছে, তা ‘সুদেষ্ণা রায়’! প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আবাস যোজনার ২০১৮ সালের যে তালিকা ধরে সার্ভে চলছে সেই তালিকায় দেখা যাচ্ছে জগদানন্দপূর পঞ্চায়েতের মুস্থুলি গ্রামে দুটি এবং আমডাঙ্গা গ্রামের তিনটি পরিবারের মিলে মোট ৫ টি পরিবারের পৃথক ৫ টি আইডি নম্বরে সুবিধাভোগী ‘সুদেষ্ণা রায়’-এর নাম রয়েছে।
উল্লেখ্য, আবাস যোজনার তালিকায় ক্রমিক নম্বর, আইডি নম্বর, সুবিধাভোগীদের নাম, পরিবারের প্রধানের নাম লিঙ্গ, সম্প্রদায় এবং জবকার্ড নম্বরের উল্লেখ থাকে। জগনানন্দপুর পঞ্চায়েতের মুস্থুলি গ্রামের একটি আইডি-তে সুদেষ্ণা রায়ের নামের সঙ্গে পরিবারের প্রধানের নাম রয়েছে নারায়ণ মাঝি। ওই গ্রামের অন্য একটি আইডি-তে এই সুদেষ্ণা রায়ের পরিবারের প্রধানের নাম শক্তিপদ খান। আমডাঙ্গা গ্রামের একটি আইডি-তে সুবিধাভোগী সুদেষ্ণা রায়ের পরিবারের প্রধানের নাম বিশ্বনাথ দাস। ওই গ্রামের আরও একটি আইডিতে সুদেষ্ণা রায়ের পরিবারের প্রধানের নাম গুরুপদ মাঝি এবং ওই গ্রামের পৃথক একটি আইডি নম্বরে সেই সুদেষ্ণা রায়েক পরিবারের প্রধান হিসেবে উল্লেখ রয়েছে মানিক দাসের নাম।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই পাঁচ পরিবারের প্রধানের মধ্যে ইতিমধ্যে মারা গিয়েছেন নারায়ণ, শক্তিপদ এবং গুরুপদ। বাকিরা জীবিত। আর তাঁদের প্রত্যেকেরই মাটির বাড়ি। শ্রমজীবী ওই পরিবারগুলির হতদরিদ্র অবস্থা। আর আইডি নম্বর ধরে অফিসিয়াল সাইটে সার্চ করলে পরিবারের প্রধানের নাম পাঁচটি ক্ষেত্রেই মিলেও যাচ্ছে। কিন্তু সুবিধা পেয়েছেন একজনই। তিনি সুদেষ্ণা রায়। এই ঘটনা জানাজানি হতেই প্রশাসনিক মহলেও চাঞ্চল্য ছড়ায়। বিশ্বনাথ দাস, মানিক দাসরা বলেন, “অনেক কষ্ট করে ভাঙা, ফুটো ঘরে বসবাস করি। ৬ বছর ধরে আশা করে আছি, সরকারি ঘর পাব বলে। কিন্তু এখন অফিস থেকে বলছে, ওই ভুলের কারণে আমরা অনুদান পাব না। আমাদের কী দোষ বলুন?”
কাটোয়া ২ বিডিও আসিফ আনসারির বক্তব্য, “সরকারি নিয়মে আইডির সঙ্গে সুবিধাভোগী, পরিবারের প্রধান থেকে জবকার্ড নম্বর সবটাই ম্যাচ করতে হবে। না হলে অনুদান আটকে যাবে। আমাদের কিছু করার নেই। তবে ওই পরিবারগুলির জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে বিষয়টি জানিয়ে সুপারিশ করব। যাতে ওঁদের কিছু সুরাহা হয়।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.