সৌরভ মাজি, বর্ধমান: বর্ধমানের নার্সিংহোমে শিশু বিক্রি কাণ্ডের তদন্ত যত এগোচ্ছে ততই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে। এই চক্র যে শুধুমাত্র পূর্ব বর্ধমান জেলা নয়, পাশের জেলাতেও ছড়িয়ে রয়েছে প্রকাশ্যে এসেছে এমনই তথ্য। পাশাপাশি, বর্ধমানের ভাঙাকুঠি এলাকার যে নার্সিংহোম থেকে শিশুটিকে বিক্রি করা হয়েছিল সেখানকার কর্মীদের যোগ্যতা ও নার্সিংহোমের পরিকাঠামোতেও বিস্তর অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। শিশু বিক্রি কাণ্ডে ধৃত নার্সিংহোমের টেকনিশিয়ান শৈলেন রায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রকাশ্যে আসতেই চক্ষুচড়ক গাছ তদন্তকারী অফিসারদের।
জানা গিয়েছে, একসময় সে ঝাড়ুদারের কাজ করত। সেখান থেকে এক লাফে টেকনিশিয়ান পদে যোগ দিয়েছিল বর্ধমানের ওই নার্সিংহোমে। আর শিক্ষাগত যোগ্যতা, চতুর্থ শ্রেণি পাশ। পঞ্চম শ্রেণীতেও ভরতি হলেও আর এগোয়নি। এই যোগ্যতা নিয়ে নার্সিংহোমের টেকনিশিয়ান পদে কাজ করছিল সে। তাকে জেরা করে পুলিশ এই তথ্য জেনেছে। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠেছে, চতুর্থ শ্রেণি পাশ একজনকে দিয়ে কীভাবে টেকনিশিয়ানের কাজ করানো হত। যেখানে রোগীর স্যালাইন দেওয়া থেকে, প্রয়োজনীয় ইঞ্জেকশন দেওয়া, অপারেশন থিয়েটারের দায়িত্ব পালন করানোর মত কাজ করানো হত বলে তদন্তে উঠে এসেছে।
কাটোয়ার পানুহাটের নিঃসন্তান দম্পতি ও শৈলেনকে শিশু বিক্রি কাণ্ডে কয়েকদিন আগেই গ্রেপ্তার করেছিল কাটোয়া থানার পুলিশ। শৈলেন কাটোয়ার দাঁইহাট এলাকায় একটি নার্সিংহোমে কাজ করত। ফাইফরমাস খাটত সে। তবে তার একটি বিশেষ গুণ ছিল, রোগী ভরতি করানোয় পারদর্শী ছিল। এই দালালি করার গুণই তাকে বর্ধমানের ওই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের নজরে নিয়ে আসে। আর ঘুরে তাকাতে হয়নি শৈলেনকে। ঝাড়ুদার থেকে সরাসরি টেকনিশিয়ান পদের কাজ পায়। সেখান থেকে নার্সিংহোমের সব অনিয়মের শরিক হয়ে পড়ে সে। শিশু বিক্রিতেও সেই হয়ে ওঠে অন্যতম লোক। শৈলেন নার্সিংহোমের অন্যতম মালিক তথা চিকিৎসক মোল্লা কাশেম আলির খুবই স্নেহভাজন ছিল বলেও জানতে পেরেছে পুলিশ। তবে রবিবার পর্যন্ত কাশেমের কোনও হদিশ পায়নি পুলিশ।
শিশু বিক্রির ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর তিনি ফোনে জানিয়েছিলেন বেঙ্গালুরু গিয়েছেন। এখনও ফেরেননি। রবিবারও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। নার্সিংহোমেও দেখা মেলেনি। পুলিশের পাশাপাশি, এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে স্বাস্থ্য দপ্তরও। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণবকুমার রায় জানিয়েছেন, সোমবার নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে সমস্ত নথি নিয়ে দেখা করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি, স্বাস্থ্য আধিকারিকরাও তদন্ত করছেন। সেই রিপোর্ট পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেবে স্বাস্থ্য দপ্তর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.