টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: কালীপুজোর জন্য সোনামুখির নামডাক রয়েছে বাঁকুড়া জেলার বাইরেও। এই শহরের কালীপুজা দেখতে দূরদুরান্ত থেকে মানুষ আসেন। বারোয়ারি পুজোর রমরমা আছে। তার মধ্যেও বেশ কিছু কালী মন্দির এখনও নিজস্বতায় আলাদা। তেমনই সোনামুখির জাগ্রত দেবী হিসেবে পরিচিত মা-ই-তো-মা কালী। এই পুজো ঘিরে রয়েছে নানা জনশ্রুতি।
[সেরা কালীপুজো নিয়ে কার্নিভাল করবে লালবাজার]
প্রবীণদের কথায় সোনমুখী শহরে একবার বর্গি দস্যুরা ওই মন্দিরে চড়াও হয়েছিল। খড়গ দিয়ে পুরোহিতের মাথা কাটতে চেয়েছিল তারা। এমন সময় দলের সর্দার হঠাৎ দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলে। এই ঘটনায় দস্যুদের মধ্যে শোরগোল পড়ে যায়। পুরোহিত তখন দেবীর ঘটের জল ছিটিয়ে দেন সর্দারের চোখে। তারপরই তার দৃষ্টি ফিরে। দুধর্ষ দস্যু চিৎকার করে ওঠে “মা-ই-তো! মা”। সেই থেকেই দেবীরও এমন অদ্ভুত নামকরণ।
[সতীর পীঠ অট্টহাস সম্পর্কে এই তথ্যগুলো জানেন কি?]
ছোট এই পুর শহরের অন্যতম প্রাচীন পুজো এটি। বর্গিদের বহু নির্দশন দেখা যায় মন্দিরে। সোনামুখি শহরের ইতিহাসেও জায়গা পেয়েছে এই কালীপুজো। এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মের হাত ধরে বেঁচে থাকে মা-ই-তো কালীর মাহাত্ম্য। প্রাচীন ধারা বজায় রেখে কালীপুজোর দিন মাটির প্রতিমাকে কালো রং করা হয়। দিন গড়িয়ে আঁধার নামলে, আকাশে সন্ধ্যাতারা উঠলে মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে আঁকা হয় দেবীর চোখ। প্রথমে ষোড়শ প্রচারে মায়ের পুজো হয়। তার মধ্যে মধ্যরাত্রি আন্দাজ করে একটা-দেড়টা নাগাদ কয়েক হাজার পাঁঠা বলি হয়। বলির পর দেবীকে তা নিবেদনের পর মাংস মহাকালের পায়ের তলায় রেখে ফের পুজো শুরু হয়। সকাল সাতটার মধ্যে শেষ করতে হয়ে মায়ের পুজো। দেবী এখানে নিরাবরণ এবং মস্তক কয়েক হাত লম্বা। প্রায় পায়ের তালু পর্যন্ত কেশ। প্রতিমার কানের পাশে থাকে লাল রং এবং ভ্রমরা-ভ্রমরি। বর্গি আক্রমণের সময় দেবীর পায়ে নিবেদন করা তরোয়ালগুলি দিয়ে তৈরি হয়েছে খড়গ। যা রাখা থাকে এই মন্দিরে। পুজো কমিটির কোষাধ্যক্ষ বুবাই বন্দোপাধ্যায় জানান, পুজোর অন্যতম উপকরণ তিন ফলকের নয়, চার ফলকের বেলপাতা। এই বিশেষ ধরনের বেলপাতা আমাদের সংগ্রহ করতে হয়। এটি ছাড়া পুজো হবে না। আমাদের মা-ই-তো-মা খুবই জাগ্রত।
[ধস-আগুন থেকে রক্ষা, সিঙ্গারণ কালীর অলৌকিকতায় বিশ্বাস আজও]
পুজোর দিন আশেপাশের হামিরপুর, পেয়ারবেড়া ,মানিক বাজার, ধানশিমলা এলাকার বাসিন্দাদের ঢল নামে সোনামুখির মা–ই–তো–মায়ের পুজো দেখতে। এই পুজোয় বহু ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষজনও যোগ দেন। তারাও বিশ্বাস করেন মায়ের চরণে কপালে ঠেকাতে পারলে জীবনের কষ্ট থেকে মুক্তি মিলবে। সৌভাগ্য ফিরবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.