দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: পাচারচক্রের শিকার হয়ে গোপনে মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন পতিতাপল্লিই ঠিকানা হয়ে গিয়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার কয়েকশো মেয়ের। বারুইপুর জেলা পুলিশ সেখানকার বিভিন্ন হোটেলে অভিযান চালিয়ে উদ্ধারে উদ্যোগী হয়েছিল। কিন্তু পতিতার জীবন থেকে আর পাঁচজনের মতো সাধারণ জীবনে ফেরা কতটা সহজ, আদৌ কি সমাজ সহজভাবে তাঁদের গ্রহণ করবে, এসব গুরুতর বিষয় নিয়ে ঘোর সন্দেহের বশে ঘরে ফিরতে চাইলেন না অনেকেই। মাত্র ২ নাবালিকাকে নিয়েই ফিরতে হল পুলিশকর্তাদের।
নারী পাচার রুখতে বারুইপুর জেলা পুলিশের অন্তর্গত ক্যানিং ও বারুইপুর মহিলা থানার পুলিশ পাচারচক্রের সঙ্গে যুক্তদের উপর নজরদারি বাড়ায়। বেশ কয়েক মাস ধরে এই নজরদারির পর এক ব্যক্তিতে হাতেনাতে ধরে। তাকে জেরা করেই পুণের বেশ কয়েকটি পতিতালয় ও হোটেলের সন্ধান পায় পুলিশ। যেখানে পাচার করা মেয়েদের ঠাঁই হয়েছে। এরপরই পুণে পুলিশের সহযোগিতায় চলে বিশেষ অভিযান। পুণেতে পৌঁছয় মহিলা পুলিশের একটি বিশেষ দল। পুলিশ সূত্রে খবর, পুণের প্রায় ৪০টি পতিতালয়ে থাকা মেয়েদের অর্ধেকেরই বাড়ি পশ্চিমবঙ্গ অথবা বাংলাদেশে। সেই সংখ্যাটা কম নয় মোটেও – প্রায় সাড়ে চারশো। এরা সকলেই দেহ ব্যবসার কাজে যুক্ত।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি ক্যানিং মহিলা থানার ওসি মুনমুন চৌধুরি, বারুইপুর মহিলা থানার আইসি কাকলি ঘোষের নেতৃত্বে পুণের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালায় পুলিশ। পুণে পুলিশ ছাড়াও আন্তর্জাতিক বিচার মিশন নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পুলিশের এই অভিযানে সাহায্য করে। পুলিশ অফিসাররা স্থানীয় গোয়েন্দাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এবং পুনে পুলিশের সহায়তায় নিউ বিল্ডিং, ওল্ড সাগর বিল্ডিং এবং নিউ সাগর বিল্ডিংয়ে অভিযান চালায়। পুলিশি অভিযানে চার পাচারকারী ধরা পড়ে। ধৃতদের মহারাষ্ট্র থেকে রিমান্ডে শুক্রবার বারুইপুরে আনা হয়। তারা বারুইপুরের বহু পাচারের মামলায় অভিযুক্ত।
জেলা পুলিশ সুপার রশিদ মুনির খান বলেন, “ধৃতরা মোটা টাকার বিনিময়ে যুবতীদের কেনার চেষ্টা করত এবং তাদের জোর করে পতিতাপল্লিতে পাঠাত। নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বারাসত, বসিরহাটের মতো বিভিন্ন এলাকা থেকে মেয়েদের কিনে পাচার করা হয়েছিল। পুলিশ আধিকারিকরা ২৫ জনকে উদ্ধার করে। যার মধ্যে ২ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক। তাদেরই ফিরিয়ে আনতে সমর্থ হয়েছে। এদের একজনের বাড়ি বাসন্তীতে, অন্যজন মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা। বাকিরা সমাজের নানা ছুঁৎমার্গের মুখে পড়ার আশঙ্কায় ফিরতে চায়নি। শুধু তাই নয় এই অভিযানের খবর পেয়ে বেশ কয়েকজন মেয়ে আগে থেকেই এলাকা ছেড়ে পালিয়েছিল। পুণে পুলিশ অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা শুরু করেছে।” তবে সমাজের মূলস্রোতে ফিরতে এদের কতটা অনীহা, তা ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.