Advertisement
Advertisement

Breaking News

Independence Day 2023

আত্মগোপন করতেন বিপ্লবীরা, এসেছিলেন গান্ধীজি-নেতাজি, তবুও ব্রাত্য পুরুলিয়ার শিল্পাশ্রম

শিল্পাশ্রমকে সংগ্রহশালার রূপ দিতে আগ্রহী পুরসভা, জানালেন চেয়ারম্যান।

Once part of the great freedom struggle, Purulia 'Shilpashram' gathers dust due to apathy

ছবি: সুনীতা সিং।

Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:August 14, 2023 5:56 pm
  • Updated:August 14, 2023 9:07 pm  

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: শুধু দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন (Freedom Movement) নয়। সাবেক মানভূমের ভাষা আন্দোলন। যাকে বিস্তীর্ণ মানভূমের ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন’ বলা হয়। সেই আন্দোলনেরও আঁতুড় ঘর প্রায় তিন দশক ভগ্ন অবস্থায় পড়ে থাকার পর সাধারণ মানুষের অর্থ সাহায্যে ২০১৪ সাল নাগাদ জোড়াতালি দিয়ে সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে বটে। কিন্তু অর্থের অভাবে মাঝেমধ্যেই থমকে গিয়ে তা ঢিমে তালে চলছে। এখানেই রয়েছে স্বাধীনতা সংগ্রামী ঋষি নিবারণ চন্দ্রের ভবন ‘নিবারণ স্মৃতি’। ১৯৮৫-৮৬ নাগাদ সেই ভাঙাচোরা বাড়ি আজও সংস্কার করা যায়নি। এভাবেই অবহেলায়, অনাদরে, উপেক্ষিত হয়ে শহর পুরুলিয়ার (Purulia) এক কোণে দাঁড়িয়ে রয়েছে শিল্পাশ্রম।

Advertisement

পুরুলিয়া শহরের তেলকল পাড়ায় এই ভবন জুড়ে রয়েছে দেশের স্বাধীনতার নানান স্মৃতি। ভাষা আন্দোলনের কর্মকাণ্ড। এক সময় মানভূম কংগ্রেসের সদর দপ্তর। ১৯২৫ সালে বিহার কংগ্রেসের প্রাদেশিক সম্মেলন উপলক্ষে এখানে পা রেখেছিলেন মহাত্মা গান্ধী (Mahatma Gandhi)। এসেছিলেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু (Netajai Subhas Chandra Bose), দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, রাজেন্দ্র প্রসাদ। পরবর্তীকালে জ্যোতি বসু, অজয় মুখোপাধ্যায়ের মত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাও। লবণ সত্যাগ্রহ থেকে ভারত ছাড়ো আন্দোলনেও বড় ভূমিকা নিয়েছিল এই আশ্রম।

এরপরও কেন ব্রাত্য? এই প্রশ্নটা কিন্তু দেশের স্বাধীনতা দিবসের (Independence Day 2023) প্রাক্কালে আবারও বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন হয়ে সামনে এসেছে। এমন একটা ভবন যাকে তো ‘হেরিটেজ’ তকমা দেওয়া যেতেই পারত। আসলে এই ভবন যে লোকসেবক সংঘের সদর দপ্তর। তাই পুরসভা থেকে প্রশাসন সেভাবে কোন আগ্রহ দেখায় না বলে অভিযোগ। অনেকটা উদাসীনও। বর্তমানে একেবারেই দুর্বল হয়ে যাওয়া লোকসেবক সংঘ হয়তো প্রশাসনের এই ‘করুণা’ চায় না! সবমিলিয়ে এই জটিল পরিস্থিতিতেও স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্মৃতি বিজড়িত এই শিল্পাশ্রম আজও নিজের মতো করে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। সাধারণ মানুষের সাহায্যেই ঐতিহ্যবাহী ভবন আবার হয়তো কোনও না কোনও দিন সেকালের মত সেজে উঠবে।

[আরও পড়ুন: র‍্যাগিংয়ের মানসিকতা তৈরি হয় কেন? কী মারাত্মক পরিণতি হতে পারে? জানালেন মনোবিদ]

এ নিয়ে পুরুলিয়ার পুরপ্রধান (Chairman) নবেন্দু মাহালি বলেন, “এই আশ্রমের সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। ওই ভবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে স্বাধীনতা আন্দোলন। আছে ভাষা আন্দোলনের গৌরবময় ইতিহাস। এই বাড়ির আপাতত যারা দায়িত্বে রয়েছেন, তারা চাইলেই পুরসভার তরফে এই ভবনকে আমরা হেরিটেজের তকমা দিতে পদক্ষেপ নেব।” ১৯২১ সালে এই শিল্পাশ্রমের জন্ম। প্রথমে আমডিহা, নীলকুঠিডাঙা, তারপর দেশবন্ধু রোড হয়ে এই তেলকল পাড়া। এই শিল্পাশ্রমের ১০০ বছর হয়ে গিয়েছে। তবে তেলকল পাড়ায় যে ভবন রয়েছে তা স্থাপন হয় ১৯২৩-এ। কেউ বলেন ১৯২৮। ১৯২৩ হলে এবার ওই ভবনের ১০০ বছর।

ছবি: সুনীতা সিং।

১৯২১ সালে গান্ধীজির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে পুরুলিয়া আদালতের ওকালতি ছেড়ে অতুলচন্দ্র ঘোষ সম্পূর্ণভাবে ‘অনিকেত’ হয়ে স্ত্রী, ছেলে-মেয়েদের নিয়ে গৃহত্যাগ করেন। পরে একইভাবে পুরুলিয়া জেলার স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাজ থেকে সরে আসেন নিবারণচন্দ্র দাশগুপ্ত। এই দুই সংগ্রামী তৈরি করেন শিল্পাশ্রম। দুটো পরিবার মিলেমিশে যায়। এই দুই পরিবারকে দেখে অনেকেই গৃহত্যাগ করে এই শিল্পাশ্রমে সামিল হতে থাকেন। তখন অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন গান্ধীজি। এই শিল্পাশ্রমের হাত ধরে এই মানভূমে তখন এই আন্দোলন দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৩০-এ লবণ সত্যাগ্রহ, ১৯৩২ সালে কংগ্রেসকে ব্রিটিশ সরকার (British Govt) বেআইনি ঘোষণা করায় এই শিল্পাশ্রমের কাজকর্মকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে এখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন দীনেশ মজুমদারের মত একাধিক বিপ্লবী। তিনি দু’দিন থেকে পাঁচদিন এখানে ছিলেন বলে জানা যায়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রাজনৈতিক কাজে যুক্ত থাকা বিপ্লবীরা এখানে আত্মগোপন করে থাকতেন। এসব কাহিনি শোনালেন লোকসেবক সংঘের সচিব সুশীল মাহাতো।

[আরও পড়ুন: ইন্ডিয়া জোটে বঙ্গ কংগ্রেসে ‘তৃণমূল অ্যালার্জি’! হাই কমান্ডের বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহী’ কৌস্তভ]

দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও এই ভবন থেকেই শুরু হয় ভাষা আন্দোলনের লড়াই। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও সাবেক মানভূমের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষজনের মাতৃভাষার ওপর আক্রমণ হয়েছিল। বাংলা ভাষায় কথা বলা যেত না। সরকারি প্রতিষ্ঠানে কোন বাংলা সাইনবোর্ড থাকত না। টুসু, ভাদু, করমের কত সংস্কৃতিকে দমিয়ে রাখা হয়েছিল। তখন প্রশ্ন উঠেছিল এ কেমন স্বাধীনতা? ব্রিটিশরা তো তাদের ভাষার উপর আক্রমণ করেনি? লোকসেবক সংঘের সচিব সুশীল মাহাতো বলেন, “তখন এই অঞ্চলের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা মহা বিপাকে পড়েছিলেন। কারণ ১৯৩২ সালে করাচি কংগ্রেস সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গঠন করতে হবে। আসলে ১৯১২ সাল নাগাদ ব্রিটিশ সরকার ধলভূম, মানভুম-সহ এই অঞ্চলকে বিহারের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করেছিল। ফলে এলাকার স্থানীয় সংস্কৃতি বিপন্ন হয়। স্বাধীন হওয়ার পরই মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন কংগ্রেসের কাজ শেষ। এবার সারা ভারত জুড়ে লোকসেবক সংঘ গঠন করতে হবে। ‘গ্রাম স্বরাজ’ তৈরি করতে হবে। কিন্তু তা আর কোথাও হয়নি এই সাবেক মানভূম ছাড়া।”

ছবি: সুনীতা সিং।

১৯৪৮ সালের ১৪ জুন এই আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতারা গান্ধীজীর ভাবাদর্শে লোকসেবক সংঘ গঠন করেন। তখন থেকেই এই আশ্রম লোকসেবক সংঘের সদর দপ্তর হয়ে যায়। শুরু হয় আরও এক ‘স্বাধীনতা আন্দোলন’। ভাষার জন্য লড়াই। পুরুলিয়াকে পশ্চিমবঙ্গে অন্তর্ভুক্তি করতে এই শিল্পাশ্রম থেকেই সাজানো হয়েছিল নকশা। ফলে ভাষা আন্দোলনের গৌরবময় ইতিহাসও আবর্তিত এই শিল্পাশ্রমকে ঘিরেই।

দেখুন ভিডিও:

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement