সংগ্রাম সিংহরায় ও রাজ কুমার: একদিকে বিমল গুরুং অন্যদিকে বিনয় তামাং, একইদিনে সভা করলেন দুই নেতা। গুরুংকে উদ্দেশ্য করে তামাং বললেন, “আমরা রাজধানী এক্সপ্রেস। বিমল গুরুং লোকাল ট্রেন। এখন আপনারাই ঠিক করুন কোন ট্রেনে চড়বেন।” আর গুরুং সরাসরি আক্রমণ করলেন বিজেপিকে। বললেন, “বিজেপি সাম্প্রদায়িক দল, হিংসাত্মক দল। তাই বিজেপিকে আর একটিও ভোট নয়।”
রবিবার শিলিগুড়ি লাগোয়া সুকনায় সভা করেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিনয় তামাং। অন্যদিকে ডুয়ার্সের আলিপুরদুয়ার জেলার বীরপাড়ার প্রগতি ময়দানে সভা করেন বিমল গুরুং। দুই নেতাই কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনায় মুখর ছিলেন। পাশাপাশি বিনয় তামাংরা বিঁধতে ভোলেননি গুরুংকে। বিজেপিকে হুঁশিয়ারি দেওয়ার পাশাপাশি বিমল গুরুংকেও অঘোষিত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন বিনয়-অনিতরা। বিনয়ের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার কাশ্মীরের সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হলেও দার্জিলিং পাহাড়ের সমস্যা সমাধানে আগ্রহী নয়। এভাবে চলতে দেওয়া যাবে না। রীতিমতো হুশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, “ওদের সময় দিচ্ছি। এর মধ্যে সমাধান করুন। নইলে যে কোনও পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।” তবে সেই পরিস্থিতি কি সেটা অবশ্য খোলসা করেননি বিনয়। পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, বিধানসভা নির্বাচনের আগে সাংবিধানিক ন্যায়ের দাবি পূরণ না হলে যে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারি।” পাশাপাশি সমস্যা সমাধানের জন্য দ্বিপাক্ষিক ও ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের দাবিও জানান তিনি। এদিন তামাং বলেন, “ডুয়ার্স ও পাহাড়ের সমস্যা সমাধানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় (Mamata Banerjee), প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি পাঠাব।” এদিন কার্যত বিমল গুরুংকে জবাব দিতে শিলিগুড়ি সংলগ্ন সুকনায় জনসভা করেন বিনয় তামাং। এদিনের সভায় অনিত থাপা ও গোর্খা জনমুক্তিমোর্চার নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ভিড় ছিল নজরকাড়া।
অন্যদিকে, বীরপাড়ার প্রগতি ময়দানে গুরুংয়ের সভাতেও ভিড় উপচে পড়ে। এদিন বিজেপিকে ভোটও দিতে বারণ করেন গুরুং। সেই সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কেন্দ্রের মোদি সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করার কথা জানান। মোদি কথা দিয়ে কথা রাখেন নি বলেও অভিযোগ করেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রথম সারির নেতারা। বক্তব্য রাখতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন গুরুং। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিজেপিকেই বিঁধেছেন তিনি। বলেন, “পঞ্চায়েতে বিজেপিকে জেতালাম, বিধানসভায় জেতালাম, লোকসভায় জেতালাম। কিন্তু আমাদের কথা দিয়েও কথা রাখেনি বিজেপি। নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ বলেছিলেন আমাদের সমস্যার সমাধান করবেন। কিন্তু সাড়ে তিন বছরে কিছুই করেননি।” উল্লেখ্য, বীরপাড়াতেই বিমল গুরুংকে পাশে বসিয়ে নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, “গোর্খাদের সমস্যা, আমাদের সমস্যা। গোর্খাদের দাবি, আমার দাবি।” বিজেপি সাংসদ জন বারলাকেও আক্রমণ করেন তিনি। গুরুংয়ের দাবি, তাঁর জন্যই টিকিট পেয়েছিলেন বার্লা। গোর্খাদের সমর্থনে জিতেছিলেন। কিন্তু এরপর গোর্খাদের কথা মনে রাখেননি। তিনি বলেন, “রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কথা দিয়ে রাখতে জানেন। তাই তাঁর হাত ধরে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে লড়াই চালাব।” এদিকে বিমলপন্থীদের তরফে বিনীতা রোকা জানিয়েছেন, সম্ভবত ২০ ডিসেম্বর দার্জিলিংয়ে সভা করবেন গুরুং। করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে সমস্ত বিধিনিষেধ মেনেই সভা হবে। দার্জিলিংয়ের সভা দেখে কালিম্পংয়ে একটি সভার পরিকল্পনা। এখন দেখার সত্যি বিমল পাহাড়ে সভা করেন কি না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.