সৌরভ মাজি , বর্ধমান: গুজবের চোটে একদিকে যেমন প্রাণ সংশয়ে ভুগছেন, তেমনই রুটি-রুজিতেও টান পড়ছে ফেরিওয়ালাদের। অভিযোগ, কোথাও ছেলেধরা তো কোথাও চোর সন্দেহে প্রায়শই হেনস্তার শিকার হচ্ছেন তারা৷ এলাকায় ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। গ্রামে গ্রামে ঘুরে জিনিসপত্র বিক্রি করতে পারছেন না পূর্ব বর্ধমানের ফেরিওয়ালারা৷ ফলে দিন দিন রোজগার কমছে৷ পেট চালানোর মতো অন্ন জোগাড় করাও কষ্টসাধ্য হয়ে গিয়েছে তাদের পক্ষে৷
[প্রশাসনের আবেদনেও কাজ হচ্ছে না, ফের ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি ভবঘুরেকে ]
পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারিতে ঘর-ভাড়া নিয়ে থাকেন একদল ফেরিওয়ালা। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে পুরনো জামাকাপড়ের বিনিময়ে বাসন বিক্রি করেন তাঁরা। বংশ পরম্পরায় এই পেশায় যুক্ত রয়েছেন সফিকুল হক, ফেকারুল শেখ, সিরাফুল শেখ, সানাউল্লা শেখ, কবিরুল শেখ, জয়নাল আবেদিনরা। তাঁদের বাড়ি মুর্শিদাবাদের ফরাক্কার ধুলিয়ানে। মেমারিতে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকেন তাঁরা। স্ত্রী-সন্তানরা অবশ্য মুর্শিদাবাদের বাড়িতেই থাকে। সফিকুলরা মাসখানেক মেমারির ভাড়া বাড়িতে থেকে কিছু রোজগার করে ফিরে যান বাড়ি। কিছুদিন সেখানে কাটিয়ে ফিরে আসেন মেমারিতে। মুর্শিদাবাদ থেকেই বাসন নিয়ে আসেন। এবং তা বিক্রি করে রুটি-রুজি চলে তাঁদের।
সফিকুলরা জানাচ্ছেন, গত কয়েকমাস ধরে চরম সমস্যা পড়েছেন। বংশানুক্রমে এই পেশায় রয়েছেন তাঁরা। কিন্তু কখনই এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়নি তাঁদের। তাঁরা মেমারিতে থাকলেও, হুগলি জেলার প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়েও ফেরি করনে। কিন্তু গত কয়েকমাস ধরেই ওই গ্রামে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন তাঁরা৷ কোথাও চোর অপবাদ দিয়ে গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না, আবার কোথাও ছেলেধরা সন্দেহ করে ফেরি করতে দেওয়া হচ্ছে না। কিছুদিন আগে হুগলি জেলার গুড়াপেতাঁদের চরম হেনস্তার মুখে পড়তে হয়েছে তাঁদেরই একজনকে৷ এমনকী, ভোটার কার্ড-আধার কার্ড দেখিয়েও রেহাই মিলছে না।
[‘ম্যাপ থেকে মুছে যাক পাকিস্তান’, বায়ুসেনাকে আরও উজ্জীবিত করলেন শহিদের বোন]
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও এক ফেরিওয়ালা বলেন, ‘‘রোজ বাড়ি থেকে যখন বের হই, তখন থেকে চিন্তায় থাকে স্ত্রী, মা ও সন্তানরা৷ সুস্থ ভাবে বাড়ি ফিরে আসব কিনা, এই চিন্তা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে আমার পরিবারকে৷ রোজ ঠাকুরের কাছে বিপদ কাটানোর প্রার্থনা করছেন ওঁরা৷’’ জানা গিয়েছে, গুজবের জেরে ইতিমধ্যেই অনেকে এই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু, কীভাবে সংসার চালাবেন? এখন এই চিন্তায় প্রহর গুনছেন তাঁরা৷ যদিও এই গুজব আটকাতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার ও প্রশাসন৷ পুলিশকে সর্বাত্মক ভাবে এর মোকাবিলা করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তাও ভয় কাটছে না বলে জানিয়েছেন ফেরিওয়ালারা৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.