শ্রীকান্ত পাত্র: স্বাধীনতা দিবসের আগেই জাতীয় কলঙ্ক! জাতীয় লজ্জা!
দেশের প্রথম শহিদ ক্ষুদিরাম বসুর আবক্ষ মূর্তি ভেঙে চুরমার করল একদল মদ্যপ দুষ্কৃতী৷ যাদের কাছে এই আবক্ষ মূর্তির স্থল ছিল স্রেফ মদ খাওয়া ও জুয়া খেলার স্থান৷ এই সমাজের কীটদের কাজে বাধা আসতেই তাদের যাবতীয় আক্রোশ গিয়ে পড়ে ক্ষুদিরামের আবক্ষ মূর্তির উপর৷ যার জেরে এই কলঙ্কজনক, লজ্জাজনক ঘটনা৷ শনিবার রাতে দাসপুরের বড়শিমুলিয়া দিঘির পাড়ের এই ঘটনায় গোটা এলাকায় শোকের পাশাপাশি ক্রোধের আগুন জ্বলছে৷ দুষ্কৃতীদের শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছেন এলাকার মানুষ৷
১১ আগস্ট গিয়েছে ক্ষুদিরাম বসুর ফাঁসির দিন৷ এই দিনটিকে ‘আত্মবলিদান দিবস’ হিসাবে পালিত হয়৷ তাঁর এই আত্মবলিদান দিবসের দু’দিন পরেই দেশের প্রথম শহিদ কালিমালিপ্ত হলেন৷ বড়শিমুলিয়া গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ক্ষুদিরামের আবক্ষ মূর্তির চত্বরে বসে দীর্ঘদিন ধরে নানা অসামাজিক কাজ চালিয়ে আসছিল একদল দুষ্কৃতী৷ মদ্যপান থেকে শুরু করে জুয়া-সাট্টার ঠেক হয়ে উঠেছিল গোটা চত্বর৷ এই কাজ বন্ধে দুষ্কৃতীদের সাবধান করে দেন স্থানীয় মানুষ৷ তাতেও অবশ্য অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি৷ এর পর দুষ্কৃতীদের আনাগোনা বন্ধে ক্ষুদিরাম স্মৃতিরক্ষা কমিটির উদ্যোগে সম্প্রতি একটি বিজ্ঞপ্তি ওই মূর্তি এলাকায় টাঙিয়ে দেওয়া হয়৷ তার পরই দুষ্কৃতীদের যাবতীয় রাগ গিয়ে পড়ে ক্ষুদিরামের মূর্তির উপর৷
স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে মূর্তির চত্বর পরিষ্কার করতে এসেছিলেন ক্ষুদিরাম স্মৃতিরক্ষা কমিটির সদস্য গৌর সাঁতরা৷ তাঁরই প্রথম নজরে পড়ে বিষয়টি৷ দেখেন, ঝোপের পাশে পড়ে রয়েছে ক্ষুদিরামের ভাঙা মূর্তি৷ মুহূর্তেই খবর চাউর হয়ে যায়৷ দলে দলে মানুষ ভিড় করেন ঘটনাস্থলে৷ ক্ষুদিরাম স্মৃতিরক্ষা কমিটির সভাপতি বীরেন দুয়ারি বলেন, “এ আমাদের জাতীয় লজ্জা৷ আমরা স্বাধীন দেশের মানুষ হয়ে প্রথম শহিদের মর্যাদা দিতে পারলাম না৷” ২০০৭ সাল থেকে ওখানেই মেলা বসে৷ ওই মেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ সাবির আহমেদ বলেন, “এ অপরাধ খুনের শামিল৷ পুলিশের উচিত দুষ্কৃতীদের অবিলম্বে খুঁজে বের করা৷” ক্ষুদিরামের দিদি অপরূপাদেবীর নাতি হাটগেছিয়া গ্রামের বাসিন্দা বিশ্বনাথ রায় স্তম্ভিত এই ঘটনায়৷ তিনি বলেন, “আমি তো ভাবতেই পারছি না এই ঘটনা ঘটতে পারে৷ আমরা কোন যুগে বাস করছি৷” ঘটনার অভিযোগ দায়ের হয়েছে দাসপুর থানায়৷ তদন্ত শুরু হয়েছে৷ ঘাটালের মহকুমা শাসক পিনাকীরঞ্জন প্রধান বলেন, “এটা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ৷ অপরাধীদের ধরতে সবরকম চেষ্টা চালানো হবে৷”
১৯০৭ সালে এই বড়শিমুলিয়ার দিঘির পাড় থেকে বাঁশ দিয়ে ডাক বিভাগের রানারের কাছ থেকে ডাক ব্যাগ লুঠ করেছিলেন ক্ষুদিরাম৷ সেই ঘটনার স্মরণে এখানে তৈরি করা হয় ক্ষুদিরামের শ্বেতপাথরের আবক্ষ মূর্তি৷ গড়ে তোলা হয় স্মারক ভবন৷ এলাকাবাসীর কাছে এই স্থানটি পবিত্র৷ সেই পবিত্র স্থানকে অপবিত্র করায় এলাকাবাসীর ক্ষোভ ও শোক একাকার হয়ে গিয়েছে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.