রাজা দাস, বালুরঘাট: মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেকে নিয়ে অর্ধাহারে ৮০ বছরের বৃদ্ধা। আগে ভিক্ষা করেই দিন চলত। দুমাস তিনি বিছানায় পড়ে গিয়েছেন। ভিক্ষা করতে না পেরে দুবেলা ভাত জোগাড় করাই কঠিন হয়ে গিয়েছে। চিকিৎসা বা ওষুধ কেনার টাকাও নেই। বৃদ্ধা শান্তিবালা মহন্তের ভরসা এখন প্রশাসন। বালুরঘাট থানার ভাটপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের খিদিরপুর বটতলা এলাকার বাসিন্দা। স্বামী গোপেশ্বর মোহন্ত অনেকদিন আগেই মারা গিয়েছেন। আর কোনও ছেলেমেয়ে মাকে দেখে না। শয্যাশায়ী বৃদ্ধার পাশে দাঁড়ানোরও কেউ নেই।
চার মেয়ের কোনও মতে বিয়ে দিয়েছেন। বিয়ের পর মায়ের খবর নিতে আসে না কেউ। তিন ছেলের মধ্যে একজন আগেই মারা গিয়েছে। বাকি দুই ছেলের মধ্যে একজন রায়গঞ্জে আলাদা থাকেন। শুধু মানসিক ভারসাম্যহীন এক ছেলে বীরেশ্বরকে (৩৫) নিয়ে বাড়িতে একাই থাকেন শান্তিবালা দেবী। বাবার কাছে কাঠের কাজ শিখেছিলেন ছেলে বীরেশ্বর। কিন্তু ১৫ বছর আগে হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। ভিক্ষাবৃত্তি ও বার্ধক্য ভাতার সামান্য অর্থ দিয়ে চলছিল। কিন্তু শান্তিবালা দেবী অসুস্থ হয়ে পড়ায় দু’বেলা দু’মুঠো ভাত জোগাড় করা মুশকিল হয়ে পড়েছে পরিবারের।
১০ বছর আগে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি সরকারি পাকাঘর পেয়েছিলেন বৃদ্ধা। তবে সেই ঘরে আর থাকতে পারেন না। যত সময় গিয়েছে, ছেলে বীরেশ্বরের মানসিক অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। সরকার থেকে পাওয়া ঘরে শ্মশানে মৃতদের কাপড় জড়ো করত। পাকাঘর ছেড়ে পলিথিন ঘেরা ঘরে একটি বাঁশের মাচায় দিনযাপন করা শুরু করেন শান্তিবালা দেবী। দু’মাস আগে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। বিছানায় শয্যাশায়ী হতেই বন্ধ হয়েছে উপার্জন। মনুষ্যত্বের খাতিরে দুবেলা খাবার দিয়ে যায় প্রতিবেশীরা। কিন্তু কতদিন এভাবে চলবে, বৃদ্ধা নিজেও জানেন না। কোনও মতে বেঁচে আছেন তাঁরা। বালুরঘাট শহরের সাহেব কাছারি এলাকার এক স্কুলশিক্ষক শক্তিপদ চন্দ বলেন, তাঁর বাড়িতে সপ্তাহে দুয়েকবার ভিক্ষা করতে যেতেন ওই বৃদ্ধা। তাঁর সাধ্যমতো সাহায্য করতেন। মাসদুয়েক থেকে বৃদ্ধা আর আসেননি। খোঁজ নিতেই জানতে পারেন কঠিন দুর্দশায় ভুগছেন। বাড়িতে গিয়ে ওষুধ এনে দিয়ে সাহায্য করেছেন। তবে তিনিও জানেন, এভাবে পাশে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। জেলা প্রশাসনের কাছে বৃদ্ধার পাশে দাঁড়ানোর আবেদন করলেন এই শিক্ষক।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.