দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: বর্ষশেষে অমানবিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে থাকল উত্তরপাড়াবাসী। বৃদ্ধা মাকে হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে চুপিচুপি পালিয়ে গেল ছেলেরা। তারপর থেকে তার আর কোনও খোঁজখবর নেয়নি কেউ। কিন্তু ওই বৃদ্ধা কয়েক দিন আগে হাসপাতাল থেকে নিখোঁজ হয়ে যান। রাস্তাকেই আশ্রয় করে একটি বাড়ির নিচে রাত কাটাতে থাকেন। শেষপর্যন্ত কোন্নগরের ও উত্তরপাড়ার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে রাস্তা থেকে সেই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে ভরতি করা হল উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উত্তরপাড়া টেলিফোন এক্সচেঞ্জের কাছে একটি বাড়ির সামনে রাস্তার উপর গত চারদিন ধরে পড়েছিলেন। প্রচণ্ড শীতে কুঁকড়ে পড়েছিলেন। স্থানীয়রাই তাঁকে কম্বল যোগাড় করে দেন। কেউ কেউ মাঝেমধ্যে খাবার এনে তুলে দিয়েছেন বৃদ্ধার হাতে। তবে বৃ্দ্ধার জিভের সমস্যার কারণে তার কথা কেউ বুঝতে পারেননি। গত চারদিনে বৃদ্ধার কেউ খোঁজ নিতেও আসেননি। এই প্রচণ্ড শীতে ধীরে ধীরে বৃদ্ধা তার সমস্ত শক্তি ক্রমশ হারিয়ে ফেলছিল। এরকম পরিস্থিতিতে শনিবার সন্ধেয় উত্তরপাড়ার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও কোন্নগরের কয়েকজন কলেজ পড়ুয়াকে দেখা যায় উদ্ধারকর্তার ভূমিকায়।
বৃদ্ধার মুখে খাবার তুলে ধরতেই তিনি ধীরে ধীরে উঠে বসেন। বহুবার জিজ্ঞাসা করার পর কোনওরকমে বৃদ্ধা বলেন তাঁর নাম শোভালক্ষ্মী। বাড়ি রিষড়ায়। কিন্তু রিষড়ার কোন অঞ্চলে তাঁর বাড়ি তা বলতে পারেননি। কিন্তু সহানুভূতির সঙ্গে গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই বৃদ্ধা কেঁদে ফেলেন। বলেন, তাঁকে ছেলেরা মারধের করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। তাই মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে এই রাস্তাকেই বেছে নিয়েছেন। বাড়িতে ফিরে যাবেন কিনা প্রশ্ন করতেই বৃদ্ধা রীতিমতো ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে ওঠেন। মাথা নেড়ে বাড়ি যাওয়ার বিষয়ে তীব্র আপত্তি জানান। এরপর ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ছেলেমেয়েরাই তাঁকে রাস্তা থেকে উদ্ধার করে উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। উত্তরপাড়া থানাকে বিষয়টি ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। আপাতত বৃদ্ধা উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বিশেষ সূত্রে জানা যায়, ওই বৃদ্ধাকে স্থানীয় ভ্যাগরান্ট হোমে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পাশাপাশি নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালেরই এক কর্মী জানান, ওই বৃদ্ধাকে তাঁর ছেলেরা কয়েকদিন আগে হাসপাতালে ভরতি করে দিয়ে চলে যায়। তারপর সুযোগ বুঝে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে চলে যান বৃদ্ধা। হাসপাতালের ঘেরাটোপ থেকে সকলের নজর এড়িয়ে কী করে বৃদ্ধা বাইরে বেরিয়ে এলেন এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এলাকার মানুষের মনে। এ বিষয়ে উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালের সুপার দেবাশিস চট্টোপাধ্যায় জানান, ওই বৃদ্ধাকে কেউ ভরতি করে দিয়ে চলে যাওয়ার পর আর কেউ খোঁজখবর নেয়নি। ওনার একটু মানসিক সমস্যাও রয়েছে। কয়েক দিন আগে উনি নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পর বিষয়টি পুলিশকে জানানোও হয়েছে। তবে পাশাপাশি এই ঘটনা আর একবার আঙুল তুলে দেখিয়ে দিল যে যাঁদের জন্য সন্তানরা পৃথিবীর আলো দেখেছে তারাই আজ তাদের সন্তানদের কাছে ব্রাত্য।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.