শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: দিদিমার বাড়িতে বসে পর্ন ছবি দেখছিল নাতি। আর তা দেখে ফেলায় চরম খেসারত দিতে হল দিদিমাকে। পুলিশের দাবি ঘটনা জানাজানির ভয়ে শ্বাসরোধ করে দিদিমাকে খুন করেছে নাতি। তবে শুধু খুনই নয়, পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে প্রমাণ লোপাটে ধর্ষণের চেহারা দিতে বিছানার উপর হাত বেঁধে ফেলে রেখে গিয়েছিল দেহ। ঘটনার দু’দিন পর মঙ্গলবার রাতে দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। আর তার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে নাতি সম্রাট দাসকে গ্রেপ্তার করেছে ময়নাগুড়ি থানার পুলিশ। ময়নাগুড়ি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র সম্রাট। ঘটনায় স্তম্ভিত পরিবার থেকে নিয়ে প্রতিবেশীরা।
স্বামী বিষ্ণু দাসের মৃত্যুর পর বাড়িতে একাই থাকতেন জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ির দোমোহনির পুরানবাজার এলাকার বাসিন্দা ঝর্ণা মোহন্ত (৬৫)। পরিচারিকার কাজ করতেন। তিন মেয়ে। দুই মেয়ের বাড়ির পাশেই বিয়ে দিয়েছেন। মেয়েদের বিয়ের পর বাড়িতে একাই থাকতেন বৃদ্ধা। মেয়ে জামাই কমল দাস জানান, মেয়ে সুমিত্রার সঙ্গে দেখা করতে নিয়মিত বাড়িতে আসতেন শ্বাশুড়ি। কিন্তু রবিবারের পর থেকে আর তাঁর দেখা পাননি।
মোবাইল ফোন বন্ধ পেয়ে মঙ্গলবার রাতে দিদিকে সঙ্গে নিয়ে মায়ের বাড়িতে যান সুমিত্রা। জানান, দরজা বাইরে থেকে বন্ধ ছিল। কিন্তু ভিতর থেকে পচা গন্ধ নাকে আসায় সন্দেহ হওয়ায় ভিতরে ঢোকেন তারা। ঘরের ভিতর ঢুকে চক্ষু চড়কগাছ। চিৎকার শুনে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা। দেখতে পান শাড়ি ছড়ানো। বিছানার উপর হাত বাঁধা অবস্থায় পড়ে রয়েছে মায়ের দেহ।
খবর পেয়ে ছুটে আসে ময়নাগুড়ি থানার পুলিশ। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে ধর্ষণ বলে মনে হলেও দেহ ময়নাতদন্তের পাঠানো হয়। বুধবার সকাল থেকে ঘটনার তদন্ত শুরু করে পুলিশ। বৃদ্ধার মোবাইল ফোন থাকলেও ঘটনাস্থলে তা পায়নি পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, সকালে সেটিকে ট্র্যাক করতেই ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেয়। উধাও হয়ে যাওয়া মোবাইলটি পাওয়া যায় নাতি সম্রাটের কাছে। সম্রাটের মোবাইল ফোন ট্র্যাক করতেই জানা যায় ঘটনার দিন রবিবার অনেক রাত পর্যন্ত দিদিমার বাড়িতেই ছিল। এরপর শুরু হয় জেরা পর্ব। জেরায় নিজের অপরাধ স্বীকার করে প্রথম বর্ষের ছাত্র সম্রাট দাস।
জানায়, ওই রাতে রান্না করছিলেন দিদিমা। বিছানায় বসে অশ্লীল ছবি দেখছিল সে। পিছন থেকে এসে তা দেখে ফেলেন দিদিমা। বাড়ির সকলের কাছে তার এই অপকর্ম ফাঁস করে দেবে বলে জানায়। পুলিশকে সম্রাট জানায়, ঘটনা জানাজানি হলে সকলে খারাপ ভাববে। এই ভেবেই মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিল তার। মুহূর্তের মধ্যে দিদিমাকে খুন করার সিদ্ধান্ত নেয়। বিছানার উপর ফেলে শ্বাসরোধ করে খুন করে। এরপর হাত বেঁধে ঘরে শাড়ি ছড়িয়ে দেয়। তারপর ঘর বন্ধ করে বাড়ি চলে যায়। সম্রাটের ধারণা ছিল ঘটনা নজরে এলে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে বলে ধরে নেবেন সকলে। সকাল পর্যন্ত সাজানো চিত্রনাট্য ধরেই ঘটনা এগোচ্ছিল। কিন্তু ভেস্তে দিল দিদিমার মোবাইল।
ঘটনায় পাড়া প্রতিবেশীদের মতোই হতবাক সম্রাটের বাবা-মা দু’জনেই। এক দিকে মাকে হারানোর যন্ত্রনা। আরেক দিকে মাকে খুন করার অভিযোগে পুলিশ ছেলেকে গ্রেপ্তার করায় কার্যত দিশাহীন সুমিত্রা দাস। বলেন, “আমি ভাবতেই পারছিনা ও এমন ঘটনা ঘটাবে।” পুলিশ সুপার খন্ড বহালে উমেশ গণপত জানান, বৃদ্ধা খুনের ঘটনায় নাতি সম্রাট দাসকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে হাজির করবে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.