সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: লকডাউনের মধ্যে প্রতিদিন ৩০ টাকা করে দিতে না পারায় বাবাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল ছেলে। মহিষাদল রাজবাড়ির দালানে ঠাঁই হয়েছিল বৃদ্ধের। মঙ্গলবার প্রশাসনের সহায়তায় বাড়ি ফিরলেন সেই বৃদ্ধ।
দীর্ঘদিন ধরেই পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলে বাস গঙ্গাধর সামন্তের। জীবনের প্রথম ভাগে সবকিছু স্বাভাবিক ছন্দে চললেও এখন যেন তাঁর গোটা দুনিয়াটাই পালটে গিয়েছে। বয়সের বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবনযুদ্ধও যেন কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠেছে। লকডাউনে হারিয়েছে মাথার উপরের ছাদও। সন্তানরা থাকা সত্ত্বেও কেন এই দশা তাঁর? জানা গিয়েছে, মেয়ে ও ছেলের বিয়ে দেওয়ার পরই ছেলে নিদান দিয়েছিল যে তাঁর সংসারে একবেলা খেতে হলে নিয়মিত ৩০ টাকা দিতে হবে বৃদ্ধকে। কোনও উপায় না থাকায় তাতেই রাজি হয়েছিলেন গঙ্গাধরবাবু। উপার্জনের আশায় নিয়মিত আইসক্রিম, চকলেট নিয়ে হাজির হয়ে যেতেন বিভিন্ন স্কুলের সামনে। উপার্জনের পাশাপাশি কোনওদিন স্কুলের বাড়তি মিড-ডে মিল কোনওদিন আবার সহৃদয় কোনও ব্যক্তির অনুকুল্যে দুপুরের খাওয়া জুটে যেত। শর্ত অনুযায়ী রাতের আহার জুটত বাড়িতেই। এভাবে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছিলেন গঙ্গাধরবাবু। কিন্তু বাদ সাধল লকডাউন। স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপার্জন বন্ধ। আর ৩০ টাকা ছাড়া ছেলের বাড়িতে খাবার তো জোটেনি, মেলেনি থাকার জায়গাও। অগত্যা রাজবাড়ির দালানে আশ্রয় নেন বৃদ্ধ।
এই খবর নজরে পড়া মাত্র নড়েচড়ে বসেন প্রশাসনের কর্তারা। স্থানীয় মানুষ ও প্রশাসনের চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত ঘরে ফেরেন বৃদ্ধ। স্থানীয়রাও নিন্দা করতে শুরু করেন বৃদ্ধের ছেলের। ফলে প্রশাসন ও স্থানীয় মানুষের সাঁড়াশি চাপে গঙ্গাধরবাবুকে বাড়ি নিয়ে যেতে বাধ্য হন ছেলে। যদিও এলাকাবাসী এতে উদারতার কিছু দেখছে না। কারণ গঙ্গাধরবাবুর পরিস্থিতি দেখে অনেক সহৃদয়ব্যক্তি এগিয়ে এসেছেন। গঙ্গাধরবাবুকে টাকা দিয়ে সাহায্য করেছেন তাঁরা। মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তিলক চক্রবর্তী বৃদ্ধকে ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। এছাড়া তিনি চাল ও ডালও দেন। এরপর থেকে ওই বৃদ্ধকে তিনি মাসে এক হাজার টাকা দেবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এর ফলেই ছেলে বাবাকে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.