রিন্টু ব্রহ্ম, কালনা: কাঁচা বাঁশ, দড়ি জোগাড় করছিলেন সকাল থেকে। তা দিয়ে শববাহী খাটিয়া তৈরি করেন। তার পর পরিবারের সদস্যদের ডেকে বলেন মারা যাওয়ার পর এই খাটিয়াতে চাপিয়েই যেন সৎকার করা হয়। পাড়ার কয়েকজন যুবককে কাঁধ দিতে হবে বলেছিলেন। ছেলেরা ভেবেছিলেন সকাল সকাল নেশা করে ভুল বকছেন বাবা। গুরুত্ব দেননি কেউই। কিন্তু পরদিন সকালেই ভুল ভাঙে তাঁদের। বাড়িতেই নিজের ঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় প্রৌঢ়র দেহ উদ্ধার হয়। বুধবার চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের কালনা থানার সুলতানপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উখলাসি গ্রামে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম দিনানন্দ মাঝি (৬৩)। পেশায় খেতমজুর। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, আত্মঘাতী হয়েছেন ওই ব্যক্তি। তবে কেন তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন তা স্পষ্ট নয়।
মৃতের ছেলে হরিবিন্দ মাঝি জানান, গত মঙ্গলবার সকালে তাঁর বাবা স্থানীয় বাগান থেকে বাঁশ কেটে ওই খাটিয়া বানান। তাঁদের জানিয়েছিলেন, মৃত্যুর পর যেন ওই খাটিয়াতে করেই তাঁর দেহ সৎকারের ব্যবস্থা করা হয় যেন। সেই কথা স্থানীয় বাসিন্দাদেরও দিনানন্দ জানান। স্থানীয় কয়েক জন যুবককেও ঠিক করেছিলেন তাঁর সৎকারে শামিল হওয়ার জন্য। পরিবারের সদস্যরা জানান, প্রথমে তাঁরা বিষয়টিকে সেভাবে গুরুত্ব দেননি। তাঁরা মনে করেছিলেন মদ্যপ হয়ে তিনি এই সব কথা বলছেন। বাড়িতে কোনও অশান্তি বা সমস্যাও ছিল না বলে পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন।
[এজলাসেই বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা বন্দির, চাঞ্চল্য হুগলি আদালতে]
কিন্তু মৃত্যুর আগে কেউ সৎকারের এইভাবে ব্যবস্থা যাচ্ছেন তা মানতে চাননি অনেকেই। মৃত্যুর পরেও যেন বিশ্বাস করতে পারছেন না তাঁরা। মৃতের পরিচিত কয়েকজন এদিন কালনা মহকুমা হাসপাতালে ময়নাতদন্তের সময় এসেছিলেন। তাঁরা জানান, মৃত্যুর আগে অনেকের আশঙ্কা থাকে, যে তাঁর মৃত্যুর পর হয়তো সৎকারের কাজে পরিবারের লোকজন এগিয়ে আসবেন না। তাই তিনি দেহ সৎকারের ব্যবস্থা নিজেই করে রেখে যেতে চেয়েছিলেন। তাঁরা মনে করছেন কোনও কারণে আত্মহত্যা করবেন তা আগে থেকেই ঠিক করেছিলেন দিনানন্দ। তাই এই ভাবে সৎকারের বন্দোবস্তও নিজেই করে রাখেন। মৃতের ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁর বানানো বাঁশের খাটিয়া করেই তাঁর সৎকার করা হয়েছে।
[প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ, স্কুলের গেটে তালা ঝোলালেন বাসিন্দারা]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.